এইমাত্র
  • চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষানবিশ এসআইরা
  • দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • বিয়ের মেহেদির রং না মুছতেই বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আটক
  • ৭২ এর সংবিধানকে নতুন করে ঠিক করার কিছু নেই: ড. কামাল
  • এবার ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরও ১৮-১৯টি মামলা রয়েছে: কায়সার কামাল
  • ফের সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩০০ রোহিঙ্গা আটক
  • পটুয়াখালী ৫ বছরের কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ
  • আমার নাম ব্যবহার করে তদবির করা হলে তা বিবেচনার সুযোগ নেই: নাহিদ
  • প্রায় ৯ ঘণ্টা পর দুই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল শুরু
  • আজ রবিবার, ২২ পৌষ, ১৪৩১ | ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    তীব্র শীত উপেক্ষা করে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন হাওরের কৃষকরা

    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম
    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

    তীব্র শীত উপেক্ষা করে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন হাওরের কৃষকরা

    সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

    ধানের জেলা হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের শীতের এই সময়ে গোটা হাওর এলাকায় পুরোদমে চলছে বোরো আবাদের ধুম। প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ হাওর উপজেলাগুলোতে কৃষক কোমর বেধে বোরো ধানের জমি আবাদে নেমেছেন। কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে বৈরী বাতাস ও প্রতিকূলতানকৃষক- কৃষাণীদের দমিয়ে রাখতে পারছে না। প্রতিদিন ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গে হাওরের কৃষক ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে ছুটে যাচ্ছেন নিজ নিজ জমিতে। চাষবাসের মাধ্যমে জমিকে চারা রোপনের উপযোগী করার জন্য জলমগ্ন হাওরের নিচু জমিতে নেমে প্রতিদিন কৃষকেরা উদয়াস্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সবুজ ধানের চারায় সবুজ করে তুলছেন হাওরে মাঠের পর মাঠ।

    হাওরে এখন বোরো ধান রোপনের সময়। শীতের এই সময় বোরো ফসলের চাষাবাদ না করলে আসন্ন বৈশাখে সংকট তৈরী হবে ঘরে ঘরে। সারা বছর খাদ্যের গানি টানতে হবে কৃষক ও হাওরবাসীকে। তাই শীত দিন দিন যতই তীব্র হয়ে আসবে তাদের গতি ততবেশি বেড়ে যাবে। প্রাকৃতিকভাবেই তারা নিজেকে এভাবে তৈরি করেছেন।

    বিস্তীর্ণ হাওরের কিষাণ-কিষাণিদের এই চিরায়ত স্বভাব-চরিত্রের আদি বৈশিষ্ট্য । বরাবরেই তারা শীতের তীব্রতাকে প্রবল মনোবলে পরাস্ত করে ধানের চারা উৎপাদন ও ধানক্ষেত তৈরিতে নেমে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কুয়াশার নিশ্ছিদ্র আবরণ কিংবা পৌষ-মাঘের হাড়কাঁপা শীত ও কুয়াশা কোনোটাই এই শ্রমজীবী কৃষকদের নিবৃত্ত করতে পারে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বোরো উৎপাদন নিয়ে হাওরাঞ্চলের সাধারণ কৃষকের মধ্যে অধিকতর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১ লাখ ৬৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওড়ের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের উৎপাদিত হয় প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন ধান। সামনের বোরো মৌসুমে কিশোরগঞ্জে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল।

    হাওরের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদকৃত ধানের মধ্যে স্থানীয় জাত, উফসী এবং হাইব্রীড জাতের ধান রয়েছে। তবে এ বছর উফসী ধানের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। এক ফসলি এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই বোরো ফসল। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে না পড়লে এ এলাকায় উৎপাদিত ধান জেলার খাদ্যচাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানিও করা হয়। কিন্তু এ অঞ্চলের দরিদ্র এবং প্রান্তিক চাষীরা ঋণ ও দাদন নিয়ে যে ফসল ফলান তার সিংহভাগ চলে যায় দায় মেটাতে। ফলে ফসল তোলার মাস দুয়েকের মধ্যেই দরিদ্র, প্রান্তিক চাষী ও কৃষকের গোলা শূণ্য হয়ে যায়। শ্রমবিক্রি এবং ধার কর্জ করে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। তবে কৃষক আশা করছেন আবহাওয়া যেন অনুকূল থাকে। তাহলেই ধানের বাম্পার ফলন হবে। তখন ধানের হাসিতে ধার-দেনা আর কৃষি উপকরণের সংকট ভুলে হাসতে পারবেন কৃষকেরা।

    গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধানের দাম বেশি হওয়ায় বেশি ভাগ কৃষকরা বোরো চাষে ঝুঁকেছেন। অনেক কৃষক ভুট্টা, সরিষা চাষ না করে বোরো চাষ করছে। এই জন্য ধারণা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি বোরো ধান আাবাদ করছে কৃষকরা।

    বিস্তীর্ণ হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতেই কোমর বেঁধে ফসলের মাঠে নেমে পরেছে কৃষকরা। যদিও গত কয়েক দিন থেকে শীতের তীব্রতা কিছুটা বেশি রয়েছে। বীজতলায় ধানের চারা পরিচর্যার পাশাপাশি জমি চাষবাদের কাজ চলছে পুরোদমে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও গভীর নলকুপ থেকে চলছে পানি সেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। আবার ডিজেল-চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সংগ্রহ করেছেন। আবার বোরো ধানের রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কৃষকের ব্যস্ততায় শীত যেন তাদেরকে স্পর্শ করছে না। শরীরে রয়েছে হালকা পোশাক, মাথায় গরম কাপড়। সব মিলিয়ে ফুরফুরে মেজাজ বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক। কিছু কিছু মাঠে জমির রোপণে কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

    ইটনা উপজেলার ধনপুর গ্রামের হাফিজ উদ্দিন জানান, হাওরের জমিগুলোতে এ মুহূর্তে যে পরিমাণ পানি আছে তা চাষাবাদের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এখন চারা রোপন করতে না পারলে কাক্ষিত পরিমাণ ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। আবার পানি নেমে গেলে বিলম্বজনিত কারণে এবং প্রচন্ড কুয়াশার কারণে চারাগাছ বিবর্ণ হয়ে মারা যাবে। এমনকি নির্দিষ্ট সময়ে চাষ করা না গেলে অকালবন্যায় ফসলহানির আশংকা থেকে যায়। তাই ঘরে পর্যাপ্ত খাবার না থাকলেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে এবং ঋণ করে নিজের জমিতে প্রতিদিন ২৫ জন কৃষিশ্রমিককে চাষাবাদের জন্য কাজে লাগাচ্ছেন।

    ইটনা সদরের চরপাড়া গ্রামের কৃষক ইসমাঈল হোসেন বলেন, আমরা পাঁচজন করে দলবদ্ধ হয়ে চারা রোপণ করি। দিনে দেড় একরেরও বেশি জমিতে চারা রেপণ করা যায়। দৈনিক জনপ্রতি আমরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো ইনকাম করতে পারি। আবার অনেক দিন কাজ থাকেও না। সর্বশেষ মৌসুমে ধানের ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা বেশ লাভের মুখ দেখেছেন, সেজন্য এবার বোরো ধানের চাষাবাদ বেশি হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

    মিঠামইন উপজেলার চারিগ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন জানান, গত মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় তাদের ধান উৎপাদন খরচ ওঠে কিছু লাভ হওয়ায় তারা এবার উৎসাহ নিয়ে নারী-পুরুষ সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। কারণ বর্গা চাষিরা জমির মালিককে আগাম টাকা পরিশোধ করে তাদের জমি পত্তন নিয়ে বোরো চাষ করেছেন।

    অষ্টগ্রাম উপজেলার কাগজী গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, দুই একর জমিতে চারা রোপণ করেছেন তিনি। বীজতলা থেকে চারা উঠানো ও হালচাষ ও চারা রোপণসহ প্রতি একরে খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা। তাছাড়া জমির বর্গা, ডিজেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধিতে বোরো আবাদে খরচ বেড়েছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে ফসল কেটে লাভবান হবে বলে আশাবাদী তিনি।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, নতুন অনেক ধান বীজ আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু এদেশের কৃষকরাই তা মাটিতে রোপন করে ফলাফল ও সফলতা নিয়ে আনে। কৃষকরাই ভতূকি দেয়। তাদের ভতূকির কারণেই এখনও কোন মানুষ না খেয়ে থাকেনি। দেশের গোটা জনগোষ্ঠিকে কৃষক তাদের শ্রম-মেধায় বাঁচিয়ে রাখছেন। গত দুই বছরে তারা ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় প্রচন্ড শীত তাদের দাবিয়ে রাখতে পারছে না। সারা জেলার ১৩টি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষকদের প্রয়োজনয়ি সহযোগতা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার সাহসি কৃষক এবার পুরোদমে বোরো উৎপাদনে নেমেছে। এবার তারা বাম্পার ফলন ও দাম পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    পিএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…