এইমাত্র
  • সাইফ আলির ওপর হামলাকারী ব্যক্তি বাংলাদেশি নন: আইনজীবী
  • ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
  • র‍্যাবকে দেখা যাবে নতুন এই রঙের পোশাকে
  • সমস্যা পোশাকে নয়, সিস্টেমে: সারজিস আলম
  • ফেসবুকে মাশরাফির মৃত্যুর গুজব!
  • রাতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে স্বাগত জানালেন বাইডেন
  • বেরোবির বহিষ্কৃত ৭১ শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ
  • কোটা ইস্যুতে আবারও আন্দোলনে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা
  • ভবিষ্যতে 'সুগার মাম্মি' হতে চান অভিনেত্রী হুমায়রা সুবাহ
  • আজ মঙ্গলবার, ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
    ধর্ম ও জীবন

    দাম্ভিক ও অহংকারীকে আল্লাহপাক পছন্দ করেন না

    এস এম ফয়সাল শামীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম
    এস এম ফয়সাল শামীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম

    দাম্ভিক ও অহংকারীকে আল্লাহপাক পছন্দ করেন না

    এস এম ফয়সাল শামীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৭ পিএম

    নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না, তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী। (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৬)। ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি লাভে উভয় প্রকার হক সংরক্ষণ করা মানুষের আবশ্যক কর্তব্য। অসৎ উপায়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যে অংকারী হয়ে যায়, পরিবারের ছোট থেকে বড় সকলকে অহংকারী বানায়, ইহকালে সে সাময়িক শান্তি পেলেও পরকালে তাকে কঠিন শাস্তি আল্লাহ দেবেন। এমনকি ইহকালেও সে কঠিন শাস্তির সন্মুখিন হবেন।

    আল্লাহ পাকের নাফরমানি এবং তার আদেশ নিষেধ অমান্য করার কারণে কবরে শাস্তি ভোগ করতে হবে। বিশেষ করে দুটি গুনাহ গীবত এবং পেশাব থেকে পরিষ্কার পরিছন্নতা অর্জন না করার কারণে কবরে শাস্তি হবে।

    হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে নবী করিম (সা.) একদিন কোথাও যাওয়ার সময় পথে সঙ্গীদের দুইটি কবর দেখিয়ে বলেন, এ দুইটি কবরে আজাব হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এদের একজন পেশাব করে পবিত্র থাকত না এবং অপরজন চোগলখোরি (কুটনামি) করে বেড়াত। বুখারী হাদীস নং৬০৫৫।

    সুতরাং আমাদের সকল প্রকার গুনাহ থেকে বাচতে হবে। চোগোলখোরী এবং গীবত থেকে বাঁচতে হবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫১। কোন ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের মান-সভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ’অর্থাৎ গীবত করা চোগোলখোরী করা।

    হযরত আবু বারযাহ আল-আসলামী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষ ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ ত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন।

    হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন; ‘কোরআন শরিফে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীকে ক্ষমা করে না দেয়া পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতেই থাকবে। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বি ইয়াদিহিল মুলক, অর্থাৎ সুরা মুলক। (আবু দাউদ-১৪০২, তিরমিজি-২৮৯১, ইবনে মাজাহ-৩৭৮৬। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

    মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। মানুষকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রধানতঃ দুটি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে, একটি হচ্ছে, হাক্কুল্লাহ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে হাক্কুল ইবাদ। মহান আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অধিকার বা কর্তব্যকে বলা হয় হাক্কুল্লাহ। যেমন ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ ইত্যাদি। হাক্কুল ইবাদ হচ্ছে এক মানুষের প্রতি অন্য মানুষের পারস্পরিক কর্তব্য। ইসলামে যেমন হাক্কুল্লাহর ব্যাপরে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, অনুরূপ ভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে হাক্কুল ইবাদের প্রতিও। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না, তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী। (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৬)।

    ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি লাভে উভয় প্রকার হক সংরক্ষণ করা মানুষের আবশ্যক কর্তব্য। রাসুলুল্লাহসহ (সা.) পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসুলগণ সমাজে বাস করেছেন, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়, সমাজ উন্নয়নে ভ‚মিকা রেখেছেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন নিয়েই একটা সমাজ গড়ে ওঠে। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ব্যতীত কাঙ্খিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যে কারণে কোরআন-হাদীসে বরংবার এ ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সকল সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিবারের সদস্যবিশেষ। সৃষ্টজীবের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে। (মিশকাত শরীফ)।

    হাক্কুল ইবাদ পালনের ক্ষেত্রে মানুষর প্রথম কর্তব্য মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের অধিকার আদায় করা। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সদ্বাচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার বাবা’। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি (সা.) বলেছেন, তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার বাবা, তারপর তোমার নিকট আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব। (বুখারী শরীফ) হাদীসে পাড়া প্রতিবেশীর প্রতিও সদ্বাচরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (বুখারী শরীফ)।

    পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর ছাড়াও বিপদগ্রস্ত, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার নির্দেশ ইসলামে প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। অন্য হাদীসে রাসুল (সা.) বলেন, বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকারীর মতো। (মিশকাত শরীফ)।

    হক্কুল ইবাদ কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরাং বাধ্যতামূলক। কেউ হাক্কুল ইবাদ আদায় না করলে কিংবা কারো হক নষ্ট করলে তার জন্য অপেক্ষা করছে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি। রাসুল (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা ও জাকাতের নেকি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সে এমন অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারও মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর অমুক অমুক (অত্যাচারিত) ব্যক্তিকে তার নেকিগুলো দেয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকি অন্যদের দাবি পূরণ করার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে। অতঃপর (অন্যদের পাপের বোঝার কারণে) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (তিরমিযী শরীফ)।

    একটি সমাজকে শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে হাক্কুল ইবাদ আদায়ের বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। সমাজের অবহেলিত, অসহায় মানুষের অধিকার আদায় ও সামাজেকে অনাচার, বৈষম্য-ভেদাভেদ থেকে মুক্ত করা সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

    এফএস

    ট্যাগ :

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…