জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকায় আসছেন। তাকে বহনকারী এমিরেটসের একটি ফ্লাইট (ইকে-৫৮৬) বিকেল ৫টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯টায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এদিন সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
বৈঠকের পর গুতেরেস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম তাকে স্বাগত জানাবেন।
এদিন কক্সবাজারে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এ অনুষ্ঠান চলাকালে দুই নেতা রোহিঙ্গা ইমাম এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
ইফতারের আগে মহাসচিব ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, লার্নিং সেন্টার, মাল্টিপারপাস সার্ভিস সেন্টার এবং একটি পাট উৎপাদন স্থাপনা। তিনি রোহিঙ্গা যুবক ও শিশুদের সাথেও কথা বলবেন।
সন্ধ্যায় ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফিরে আসবেন গুতেরেস। শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের ভবন পরিদর্শন করবেন, যেখানে তিনি জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করবেন, বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী পর্যবেক্ষণ করবেন এবং জাতিসংঘের কর্মীদের সাথে একটি সভায় যোগ দেবেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা গুতেরেসের এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ ও প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধির ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ।
বিকেলে তিনি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর একটি গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেবেন। তিনি তরুণদের সঙ্গে একটি সংলাপে অংশ নেবেন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পরে গুতেরেস হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হোসেনের সঙ্গে একটি যৌথ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভাষণ দেবেন। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব রোববার (১৬ মার্চ) সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অবগত আন্তোনিও গুতেরেস। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গিয়েছিলেন। প্রায় ৭ বছর পর এবার ভিন্ন বাস্তবতা ও পরিবর্তিত বাংলাদেশে ৪ দিনের সফরে আসছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক শাহাব এনাম খান বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফরে আলোচনার কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ইস্যু। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার বিষয়টি জোর দেবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কতটা জরুরি তাও জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
এছাড়াও, রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও মনে করেন এই বিশ্লেষক।
এবি