এইমাত্র
  • আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে ইনুর মামলায় আজ তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য
  • ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা, কবে-কখন কার সঙ্গে কার ম্যাচ
  • যারা এতদিন নির্বাচনের জন্য পাগল ছিলেন, তাদের এখন ভিন্ন সুর: জামায়াত আমির
  • খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করছে সরকার : প্রেসসচিব
  • নীলফামারীতে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল
  • ভারত-সমর্থিত গোষ্ঠীর ৯ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি পাকিস্তানে
  • ট্রাম্পের ‌‌চরম অযোগ্যতায় এবার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত-রাশিয়া
  • মিয়ানমারে বিমান হামলায় নিহত অন্তত ১৮
  • খালেদা জিয়ার জন্য মঙ্গলবার ঢাকায় আসার অনুমতি চেয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
  • আজ রবিবার, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    আন্তর্জাতিক

    গাজায় এক মাসেই ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি ভাঙল ইসরায়েল

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১০ পিএম
    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১০ পিএম

    গাজায় এক মাসেই ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি ভাঙল ইসরায়েল

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১০ পিএম

    অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এই এক মাসে ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

    গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, ১০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে- আকাশপথ ও স্থল হামলা, গোলাবর্ষণ এবং সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২৪২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬২২ জন আহত হয়েছেন।

    গাজা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল ৮৮ বার সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে, ১২ বার আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়েছে, ১২৪ বার বোমা বর্ষণ করেছে, এবং ৫২ বার ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। এছাড়া ২৩ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এইসব হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজার ওপর মানবিক সহায়তা অবরোধ ও অবকাঠামো ধ্বংস অব্যাহত রেখেছে।

    যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি: গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার অধীনে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়। তবে এই প্রস্তাবে কোনো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিল না।

    ১. পরিকল্পনার প্রথম ধাপে বলা হয়: ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষের সব ধরনের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।

    ২. ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজায় সবধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।

    ৩. গাজায় বন্দী থাকা সব ইসরায়েলিকে মুক্ত করতে হবে, জীবিত বা মৃত যেই হোক না কেন।

    ৪. ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে ‘ইয়েলো লাইন’ পর্যন্ত পিছু হটতে হবে।

    ১৩ অক্টোবর মিশর, কাতার ও তুরকির মধ্যস্থতায় প্রায় ৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তবে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল, যা এই চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

    সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পরের ৩১ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র ছয় দিন গাজায় কোনো সহিংসতা বা প্রাণহানি ঘটেনি। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যাচ্ছে যে ‘যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে’।

    গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ২৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ ও ২৯ অক্টোবর ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। এই দুই দিনে ১৫৪ জন প্রাণ হারান।

    ১৯ অক্টোবর রাফাহ এলাকায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল হামাসকে দায়ী করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যাতে ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। তবে হামাসের সামরিক শাখা ‘আল কাসাম ব্রিগেড’ জানায়, রাফাহ অঞ্চল সম্পূর্ণ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে এবং সেখানে কোনো ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ছিল না। গুলি বিনিময়ের ঘটনায় এক ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হলে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালায়, এতে ১০৯ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ৫২ জনই শিশু।

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল পাল্টা আঘাত করেছে, আর তাদের করা উচিতও ছিল।’ তিনি এই হামলাকে ‘প্রতিশোধ’ বলে অভিহিত করেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ‘সব ধরনের মানবিক সহায়তা অবিলম্বে গাজায় পাঠানো হবে।’ কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

    বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার মাত্র অর্ধেক পৌঁছাচ্ছে। ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থাগুলোর জোট বলছে, যুদ্ধবিরতিতে যে পরিমাণ সহায়তা দেয়ার কথা ছিল, তার মাত্র এক-চতুর্থাংশ বাস্তবে পৌঁছেছে।

    ১০ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত গাজায় পৌঁছেছে মাত্র তিন হাজার ৪৫১টি ট্রাক, যেখানে চুক্তি অনুযায়ী এই সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল প্রায় ১৫ হাজার ৬০০। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ৬০০ ট্রাক প্রবেশের কথা থাকলেও বাস্তবে পৌঁছেছে মাত্র ১৭১টি ট্রাক।

    এদিকে হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, ১৫ হাজার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে-যা ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে।

    এছাড়া ইসরায়েল ৩৫০টিরও বেশি অপরিহার্য খাদ্যপণ্য, যেমন মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও শাকসবজি নিষিদ্ধ করেছে, অথচ অস্বাস্থ্যকর খাদ্য যেমন চকোলেট, স্ন্যাকস ও কোমল পানীয় প্রবেশে অনুমতি দিয়েছে।

    ১৩ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস গাজায় আটক থাকা ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয় এবং বিনিময়ে ইসরায়েল এক হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। এছাড়া হামাসের কাছে থাকা ২৮ ইসরায়েলির মৃতদেহের বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৬০ ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত হামাস ২৪ ইসরায়েলির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে, বাকিগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে বলে জানায়।

    অন্যদিকে, ইসরায়েল ৩০০টি ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলিতে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল এবং বেশ কয়েকজনের পরিচয় অজানা।

    লিবার ইনস্টিটিউটের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি মানে হলো ‘সক্রিয় যুদ্ধ স্থগিত করা’ বা ‘সংঘাতকে সাময়িকভাবে স্থির করা’। তবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করা সবসময় আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়-যদি না তা কোনো বাধ্যতামূলক চুক্তি বা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের অংশ হয়।

    বর্তমান বাস্তবতা হলো-‘যুদ্ধবিরতি’ নামে যে সময় চলছে, সেটি গাজাবাসীর কাছে এখনও রক্ত, ধ্বংস ও ক্ষুধার সময়, যেখানে প্রতিদিনই নতুন করে ফুঁসে উঠছে এক দগদগে মানবিক বিপর্যয়।

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…