এইমাত্র
  • পুরোদমে চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতির কাজ
  • ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের তথ্য বানোয়াট: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  • বিয়ে করে সংসার করেছিলাম, সেটার স্বাদও নিয়েছি: জয়া আহসান
  • পারিবারিক সহিংসতার শিকার নির্মাতা!
  • হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি সরকার বাংলাদেশের ওপর বিরক্ত: ধর্ম উপদেষ্টা
  • আমাকে বলছেন নাটক ছেড়ে দিতে, কিছুই তো বুঝতেছি না: নিলয় আলমগীর
  • ওষুধ কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে ভূমিদস্যু হায়না মোবারক হওয়ার গল্প
  • চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের চোখেমুখে আক্রোশের ছাপ!
  • চাদের রাষ্ট্রপতির কার্যালয় দখলের চেষ্টা অস্ত্রধারীদের, নিহত ১৯
  • ভারতে মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে নিহত ৬
  • আজ বৃহস্পতিবার, ২৬ পৌষ, ১৪৩১ | ৯ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    যশোর হাসপাতালে প্রকাশ্যে দালাল চক্র, সহায়তার নামে প্রতারণা !

    বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশ: ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম
    বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশ: ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম

    যশোর হাসপাতালে প্রকাশ্যে দালাল চক্র, সহায়তার নামে প্রতারণা !

    বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি প্রকাশ: ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম

    দালালের ভারে ডুবছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। বিগত দিনে জেলা প্রশাসনের কঠোরতায় সরকারি এই হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য কমলেও বর্তমানে তারা প্রকাশ্যে রয়েছে। তারা মানুষের অসহায়ত্বকে পূঁজি করে সহায়তার নামে রীতিমতো করছেন প্রতারণা। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে হাসপাতাল দালালমুক্ত না হওয়ার নেপথ্যের কিছু কারণ । এরমধ্যে নিয়মিত দালাল রিবোধী অভিযান পরিচালনা না হওয়া, বিভিন্ন সময় অভিযানে আটক হওয়া দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করা, হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক ও কর্মচারীর পৃষ্টপোষকতা, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসী মালিকদের সম্পৃক্ততা, হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশের সহায়তা উল্লেখযোগ্য। দালালদের খপ্পরে পড়ে রোগী ও স্বজনরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন থেকেই। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ওষুধ ফার্মেসীর অর্ধশত দালাল সরকারি এই হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে জমপেশ প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অধিকাংশ দালাল হাসপাতালের আশেপাশের এলাকার হওয়ায় প্রভাবের সাথে প্রতারণা কর্মকান্ড করে থাকে। ২টি সিন্ডিকেটে অর্ধশতাধিক দালাল হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের কাছে নেতিবাচক নানা কথা বলে তাদের ভাগানোর কাজ করেন। এখানকার চিকিৎসাসেবা ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পর্কে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত ও দুর্বল করে তোলে। হঠাৎ দেখে কারো বোঝার উপায় থাকবেনা যে তারা মানুষ ঠকিয়ে পকেট ভারী করে।

    সূত্র জানায়, এসব দালালের সাথে হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক ও কর্মচারীর সুসম্পর্ক রয়েছে। হাসপাতাল থেকে তাদের হাতে রোগী তুলে দিলে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণে কমিশন পান। সূত্রটি আরো জানায়, দালালদের অধিকাংশরা বিভিন্ন পরিচয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। কোন না কোন প্রভাবশালীর সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

    অভিযোগ উঠেছে, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ ফার্মেসীর নিয়োগকৃত দালালরা পুলিশের সহায়তায় ফাঁদ পেতে প্রতারণা জোরদার করে। রোগী ভাগিয়ে নিয়ে তারা কমিশনে বিক্রি করছে। আবার ৩শ টাকার ওষুধ অনেক সময় দাম হয়ে যায় ৩ হাজার টাকা। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে রেখে দেয়া স্লিপে দালালরা ইচ্ছামতো দামি ওষুধের নাম লিখে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এমনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন যশোর সদরের চান্দুটিয়া গ্রামের শিপন হোসেন। দালালের খপ্পরে পড়ে আমিরুলের ২১শ’ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে। শিপনের মতো অনেকেই প্রতিদিন ফার্মেসী দালালের কবলে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। দালালী করে আয় করা অর্থের ভাগ পাচ্ছে হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি এই হাসপাতালকে ঘিরে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে অর্ধশতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। দালালদের কেউ কেউ কোনো কোনো ক্লিনিকের মালিক বনে গেছেন। আবার কারও কারও অংশীদারি আছে বিভিন্ন ক্লিনিকে। দালালদের সহযোগিতা নিয়েই ওই এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী হাসপাতাল ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মূলত সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নেয়া রোগীই তাদের হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

    জানা গেছে, হাসপাতালের মূল ফটক থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত গোটা হাসপাতালে দালালের অবাধ বিচরণ। স্বেচ্ছাসেবক নাম দিয়ে প্রকাশ্যে দালালি করারও সুযোগ দেওয়া হয়েছে কয়েকজনকে। তারা রোগীদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। প্রতিবাদ করলে ওই দালালেরা হুমকি দেয়। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে দালালরা প্রকাশ্যে প্রতারণা করার সাহস দেখাতো না।

    যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের রকিবুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সরকারি এই হাসপাতালে বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য এসেছিলেন। টিকিট কাউন্টার থেকে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার পর তিনি এক দালালের কবলে পড়েন। ওই দালাল তার রোগের কথা শুনে বলেন এখানে ডাক্তার ভালো করে দেখবেন না। সামান্য টাকার জন্য কেনো সরকারি এই হাসপাতালে রোগী দেখাবেন। আমার সাথে চলেন তিনশ’ টাকা ফি দিয়ে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দেবো। সরল মনে তিনি ওই দালালের সাথে হাসপাতালের গাঁ ঘেষে একটি ক্লিনিকে যান। সেখানে ডাক্তার দেখানোর পর বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়েছে। চিকিৎসকের ফি ও পরীক্ষা বাবদ ২২শ ৫০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তার কাছ থেকে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, অর্থোপেডিকের কয়েকজন চিকিৎসক সরাসরি দালালীতে নেমেছে। তারা ওয়ার্ড রাউন্ডে এসে রোগীদের বিভিন্ন কথা বলে আতংকগ্রস্থ করে নিজেদের ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যে রোগী যেতে রাজি না হয় নানা অজুহাতে তার দীর্ঘদিনেও সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করা হয়না। আবার বর্হিবিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দায়িত্বরত একাধিক কর্মচারী রোগী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে পাঠিয়ে দেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য। বিনিময়ে তারা কমিশনের টাকা পান। জানা গেছে, ভ্রাম্যমান আদালত বিগত দিনে এই হাসপাতালে বহুবার দালাল রিবোধী অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে একাধিক দালালকে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার করা ও অভিযানে আটক হওয়া দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হলে দালালরা হাসপাতালে প্রবেশ করতে ভয় পাবে।

    হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ১০টি মাইকযোগে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে দালাল বিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তারপরও তারা মানুষ তাদের খপ্পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পেশাদার দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন।

    এই বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রী শেখর সরকার জানিয়েছেন, ২ জানুয়ারি থেকে পুলিশ দালাল বিরোধী অভিযান করেছে। দালালদের কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান এই চিকিৎসক কর্মকর্তা।

    পিএম

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…