এইমাত্র
  • মিরাজের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বাবার সাক্ষাৎ
  • হামাস ‘সন্ত্রাসী’ নয়, ‘স্বাধীনতাকামী’ সংগঠন: এরদোগান
  • হঠাৎ মিমকে হারুনের ফোন, সরে দাঁড়াতে বলেন যে সিনেমা থেকে
  • লেবাননে পৌঁছেছে তুরস্কের ৩০ টন মানবিক সহায়তা
  • বৃষ্টিতে ভেসে যেতে পারে কানপুর টেস্টের প্রথম দিন!
  • শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রী হরিণী অমরাসুরিয়া
  • কৃষিকে কৃষকবান্ধব করতে হবে: উপদেষ্টা
  • ঢাকা জেলার সাবেক ডিসির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
  • দেশে স্বর্ণের দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ
  • নিষিদ্ধ জামাতুল আনসারের ৩২ জনের জামিন বাতিল
  • আজ বুধবার, ১০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
    শিক্ষাঙ্গন

    তুলে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ববি ছাত্রলীগ নেতা রাজীবের বিরুদ্ধে

    ক্যাম্পাস প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
    ক্যাম্পাস প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম

    তুলে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ববি ছাত্রলীগ নেতা রাজীবের বিরুদ্ধে

    ক্যাম্পাস প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম

    তুলে নিয়ে নির্যাতন করে চাঁদাবাজির টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী নেতা রাজীব মন্ডলের বিরুদ্ধে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় অর্থাৎ কর্ণকাঠিবাসী জিম্মি ছিলেন ক্যাম্পাসের পরিচয়ধারী কিছু ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে।বাড়িঘর ভাঙচুর, জমি দখল, অবৈধ বালুর ব্যবসা, বাকী খাওয়া থেকে শুরু নানান অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে অনেক ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও হতেন নানান নির্যাতনের শিকার।তবে নির্যাতনকারীর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাজীব মন্ডলকে এলাকাবাসী আটকালে একে একে সব সামনে আসে তাদের (ছাত্রলীগের) অপকর্ম।

    গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোলা রোড সংলগ্ন কাঁচাবাজার থেকে স্থানীয়রা রাজীব মন্ডলকে আটক করে।এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ রাফিনের বাসায় ওঠেন রাজীব। আটকের সময় স্থানীয় লোকজন চড়াও হয় এবং নির্যাতিত ব্যক্তি ও পাওনাদাররা জড়ো হতে থাকে।পরে স্থানীয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাকে ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে আটকে রাখে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে দেখা যায়।নানান অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় স্থানীয়রাও।

    স্থানীয় যুবক জাকির মৃধা জানান,ছাত্রলীগ নেতা রাজিব মন্ডলের নেতৃত্বে আমাকে রাতের আধারে দপদপিয়ার পুরাতন ফেরিঘাট মাদ্রাসার একটি জায়গায় আমাকে তুলে নেয়।আমাকে অনেক নির্যাতন করে এবং চাঁদার টাকা চায়।জীবনের ভয়ভীতি দেখায় তারা।এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে আমি তাদেরকে (ছাত্রলীগ) ৭০ হাজার টাকা দিছিলাম।

    তবে এসব কাজে শুধু শুধু রাজিব মন্ডল একা জড়িত নয় বলে জানা যায়। মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত,আল সামাদ শান্ত,আবুল খায়ের আরাফাত সহ বেশ কয়েকজন নেতাও জড়িত ছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।পারিবারিক ঝামেলা মিটিয়ে চাঁদাবাজি করতেন। এমনকি যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে সড়কে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।বাকি খেয়ে টাকাও পেতেন অনেকে। এসব বিষয়ে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রিয়াজ হাওলাদার বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও তাদের অপকর্মের কথা শুনেছেন বলে জানায়।

    স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, রাজিব মন্ডল,সিফাত, আল সামাদ শান্ত,আরাফাত সহ বেশ কয়েকজন হেরা আমাকে ভার্সিটির পাশে হিরন্ময় প্লাজা জসিমের ভবনে তুইলা আনে ও আটকে রাখে।এটাই মনে হয় তাদের টর্চার সেল।তারা বলে,তোর ভাই ছাত্রদল করে তারে আইনা দে,নাইলে টাকা দে।আমাকে ছাপরছোপড় দিছে আল্লার নাম লইয়্যা।আমার বাবা নেই কিন্তু মা বোনকে গালিগালাজ কইরছে তারা। হেরপরে ঘাড়ে বিড়ির ছ্যাঁকা দেছে,পিটাইছে।জোর করে দেড় লক্ষ টাকার স্বীকারোক্তি নিছে আমার থেইকে।কারণ,আমার ভাই (রিফাত) ছাত্রদল করে।

    তিনি জানান, রাস্তা দিয়ে গেলে ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী আরাফাত বলত, মামা...টাকা রেডি হয়ছে? নাইলে কিন্তু খবর আছে...আমি সামান্য একটা সুপারশপে চাকরি করতাম।এত টাকা কয় পামু! একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ধার করে ৫০ হাজার টাকা দি তাদের।'

    এছাড়া রাজিব মন্ডলকে আটকানোর সময়ে তাদের পাওনা টাকার কথা জানান স্থানীয়রা।৩৫ জনেরও অধিক মানুষ রাজীবের কাছে টাকা পাবে বলে স্থানীয়রা জানায়।তবে উপস্থিত বেলা ৪টায় মোট ৩৫ জন পাওনাদার তাদের পাওনার কথা বলে।এতে মোট পাওনা দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।পরে রাজীব মন্ডলের পক্ষ হয়ে একটি ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর করেন আল আমিন নামে এক যুবক।তিনি জানান,ওই সময়ে একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমি জামিন নিয়ে চেকে স্বাক্ষর করি।এছাড়া কিছু না।

    এ সময় উপস্থিত কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তার (রাজিব মন্ডল) কাছে প্রায় দোকানদার টাকা পায়। এমনকি মুচি ও নাপিতও তার (রাজিব) কাছে টাকা পায়।

    আল-মদিনা হোটেলের সত্ত্বাধিকারী জানান, রাজিব মন্ডল আমার দোকানে আসত।বলতো যা যা আইটেম আছে সব খাবার নিয়ে আই।সব খাবো।গরুর মাংস, ডিম সব খাইছে।কিন্তু টাকা দেয়নি।টাকা চাইলে বলতো চুপ,ফিসফিস করবিনা।তিন হাজার টাকা পাবো কিন্তু তিন চারমাস ধরে তার (রাজিব) আর দেখা পাইনি।

    ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে বালু ফালানোর জন্য জাহাজ নিয়েছি। পাইপ বিছানো হইছে। এমন সময় রাজিব মন্ডল গিয়ে আমাকে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের খরচ দেন। নইলে বালু ফেলতে পারবেন না। পরে আমাকে আমার জমিতে বালু ফেলতে দেয় নাই।

    ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রাজিব মন্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিক্রি করে খেয়েছে। এর সাথে আরও যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম এতদিন যারা নষ্ট করেছে তাদের অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের আইনের আওতায় আনা উচিত।

    তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে রাজীব মন্ডলকে ফোন করা হলে সাড়া মেলেনি।তবে একটি গণমাধ্যম থেকে জানা যায়,তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে। রাজীব বলেন,এখানে বেশি করে লিখে রেখেছে। আমার কাছে এত টাকা পাবে না। যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে আমি তাকে এর দ্বিগুণ দিব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরং আমি মানুষের কাছে টাকা পাব। সেগুলো উঠাতে এসেছি। এখানে আমাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।’

    বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ছিল না। তবে দুটি গ্রুপ বিদ্যমান ছিলো।সাবেক বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ছিলো মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাত,আলিম সালেহী,আল সামাদ শান্ত সহ অন্যরা।

    অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছিলেন অমিত হাসান ওরফে রক্তিম ও ময়িদুর রহমান ওরফে বাকি। দুই পক্ষেরই বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুই পক্ষরই থেকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে নতুন নেতৃত্বে আসতে দেখা যায়।

    অনেকে রুপ পাল্টিয়ে যোগ দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী হিসেবে। তবে রাজিব মন্ডল যে যখন আধিপত্য বিস্তারের নেতৃত্ব দিত তখন তার অনুসারী থেকে সুবিধা নিতেন বলে জানা যায়।গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে এসব নেতারা ক্যাম্পাস থেকে লাপাত্তা রয়েছেন।তবে ঘুরে ফিরে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জনের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের অভিযোগ আসলেও সামনে আসেনি এখনো।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…