জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের যে তথ্য বিগত সরকার আমাদের দিয়েছিল, তার ভিতরে মারাত্মক সমস্যা ছিল উল্লেখ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, তথ্য উপাত্তের বড় রাজনীতিকরণ করেছে বিগত সরকার।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে ‘পলিসি ডায়ালগ অন ফিন্যানসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাংলাদেশের দুটো কিডনি। একটি ফিন্যানসিয়াল সেক্টর, আরেকটি এনার্জি সেক্টর। দুটোই খেয়ে ফেলেছে বিগত সরকার। যারা এনার্জি সেক্টর খেয়েছে, তারাই আবার ফিন্যানসিয়াল সেক্টর খেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মাসোহারা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে লোক রাখা হয়েছিল। তারা টাকা ছাপিয়েছে, ভুয়া রিজার্ভ দেখিয়েছে। ব্যাংক চালানোর মত যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও এমন ব্যক্তিকে ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
উন্নয়নের বয়ানের ব্যবস্থা করা না গেলে এগোনো সম্ভব নয় জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে প্রবৃদ্ধির তথ্য ও উপাত্তে মারাত্মক সমস্যা ছিল। তথ্যে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, যেখানে ট্যাক্স জিডিপি বাড়েনি। ট্যাক্স নাই, বিনিয়োগ নাই আর দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে গিয়ে সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য শিক্ষায় গুরুতর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে আছি। রাষ্ট্রের মেরামত যদি না হয়, দুই পয়সার সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা না গেলে, সংস্কারের পথে এগোনো সম্ভব নয়। মানুষের ধৈর্য থাকবে না বলে মনে করেন।’
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার পর, যদি দ্রুত সংস্কার না করা যায় তাহলেও এগোনো সম্ভাবনা হবে না বলেও মন্তব্য করেন সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংস্কার ছাড়া কোন উপায় নেই। বিএসইসি মার্কেট রিফর্ম করতে চায়। বর্তমান মার্কেটকে উল্লেখ্যোগ্য যায়গায় নিয়ে যেতে কাজ করছি। বিএসইসির কিছু কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হয়েছে। মার্কেটে শেয়ার সাত শতাংশ, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘসময় মূলধন বাড়াতে যে ভূমিকা রাখা উচিত ছিল তা করতে পারিনি। ফিন্যানসিয়াল ইনস্ট্রুমেন্টকে মার্কেটে আনতে পারিনি। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় পরিণত হয়েছে। সংস্কার ছাড়া আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়।’
সেমিনারে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসাইন বলেন, ‘সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থনৈতিক সেক্টরে লুটপাট হয়েছে। যেখানে ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরা জড়িত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পুনর্গঠনে অর্থনীতি স্থিতিশীলতা আনতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ডিজিটালাইজ করতে হবে অর্থনৈতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে।’
এর আগে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে অন্তবর্তী সরকার।
উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন নিয়ে কমিটির সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ২৮ আগস্ট বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এইচএ