বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার তাদের শীর্ষ ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান দিয়েছেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ড. ইউনূসকে নিয়ে নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেন দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।” নেচার তাকে আখ্যা দিয়েছে ‘নেশন বিল্ডার’ বা জাতি গঠনের একজন স্থপতি হিসেবে।
ইউনূসের অনন্য অবদান
নেচারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা গত এক বছরে বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে তার জীবনব্যাপী কাজের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্রঋণ মডেল।
১৯৭০-এর দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় থেকেই তিনি মাইক্রোক্রেডিটের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে তার গড়ে তোলা গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়। তবে ক্ষুদ্রঋণের ধারণা যেমন জনপ্রিয় হয়েছে, তেমনি এটি নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান প্রেক্ষাপটে ইউনূসের ভূমিকা
নেচারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথাও উঠে এসেছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ছাত্র আন্দোলনের দাবিতে তার নেতৃত্বকে সমর্থন দেওয়া হয়।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ মুশফিক মোবারক মন্তব্য করেন, “ড. ইউনূস এবং তার সহযোগীরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে কাজ করছেন।” তবে গবেষকরা মনে করেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দ্রুত সম্ভব নয় এবং এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।
ইউনূসের সামনে চ্যালেঞ্জ
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব যেমন কঠিন, তেমনি এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগও। তার শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা এবং বৈশ্বিক যোগাযোগ দক্ষতা তাকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র আন্দোলন এবং তাদের ভূমিকার বিষয়টিও নেচারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ছাত্রদের সমর্থনে ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা দেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই স্বীকৃতি কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্যের প্রতিফলন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্যও গর্বের একটি অধ্যায়।
এসএফ