জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় প্রধান সড়কসহ গ্রামের অলিগলির সড়কগুলো দাপাচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর। এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে রাস্তা তেমনি ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। চলতি সপ্তাহে পর পর দুই দিনে উপজেলার হাতীভাঙ্গা ইউনিয়নের কাঠারবিল চকপাড়া মোড় এলাকায় ট্রাক্টরের চাপায় এক নারী ও চর আমখাওয়া ইউনিয়নের কারির মোড় এলাকায় চার বছর বয়সী এক শিশু, মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় সময়েই ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হওয়ার ঘটনা অনেক। এছাড়াও গেল বছর বাবার ট্রাক্টররের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিশু সন্তানের মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে উপজেলার চর কালিকাপুর এলাকায়। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও চালকের শান্তি না হওয়ায় দিন দিন ট্রাক্টর চালকরা আরও বেপরোয়া হচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তারা ট্রাক্টরকে মালামাল পরিবহনের বাহন হিসেবে ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হরহামেশায় রাস্তায় চলছে এসব ট্রাক্টর। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, এসব অবৈধ গাড়ি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, কৃষিকাজের জন্য আমদানি করা এসব ট্রাক্টরে ইট, বালু, মাটি পরিবহনসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার কাচা- পাকা সড়কে এসব ট্রাক্টর হরহামেশায় চলাচল করায় রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। এ সব ট্রাক্টর ইটভাটার মালিক ও মাটি-বালু ব্যবসায়ীরা মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে। ট্রাক্টরের চালকদের লাইসেন্স নেই। যে কেউ চালাচ্ছেন এসব যান। উপজেলায় কতগুলো ট্রাক্টর আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। সংখ্যাটা জানারও কোনো উপায় নেই।
উপজেলার চর আমখাওয়া, ডাংধরা, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙ্গা, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা ও দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অল্প সময়ের ব্যাবধান মাটি, বালু ও ইট বোঝাই করা ট্রাক্টর বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে। অতিরিক্ত ট্রাক্টর চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। সড়কের পাশে আবাদি জমির ফসলে, বাড়ী ঘরে লেগে আছে ধুলাবালি আস্তরণ। দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে বিভিন্ন ইটভাটার ইট, মাটি, বালু নিয়ে এসব ট্রাক্টর চলাচল করছে। এসব ট্রাক্টর চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, বেশির ভাগ চালকের বয়স ১৪-১৮
স্থানীয়রা জানান , সড়কে এসব ট্রাক্টর চলাচলের কারণে পাকা সড়কের ওপরের আস্তরণ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে কাচা সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে উঠছে। এ সকল সড়ক মেরামত করতে প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে।
বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজ সালাম সজীব বলেন , আমার বাড়ির সামনের সড়কে প্রতিদিন চলছে অসংখ্য ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টরের বিকট শব্দে বাড়ির শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সড়কে এসব চাষের যন্ত্রের চলাচল বন্ধের দাবি তার।
পথচারী সাগর খান বলেন, এসব ট্রাক্টরের জন্য রাস্তায় রেব হতেই ভয় করে। ড্রাইভারদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। বেশির ভাগ ড্রাইভার কম বয়সী ছেলে। কানে হেড ফোন লাগিয়ে ওরা বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালায় প্রতিবাদ করলে উল্টো দুর্ব্যবহার করে। বেশির ভাগ ট্রাক্টরের মালিকেরা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় পথচারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করার সাহস দেখায় ট্রাক্টর চালকেরা।
ট্রাক্টর চালক হোসেন আলী বলেন, ট্রাক্টরে লুকিং গ্লাস থাকে না। পেছনে কোন যানবাহন আসে কি না তা বুঝা যায় না। পেছন থেকে যানবাহন হর্ন দিলেও ইঞ্জিনের শব্দে তা বোঝা যায় না। গাড়ির কঠিন ব্রেক সিস্টেমের থাকলেও লুকিং গ্লাস না থাকায় হঠাৎ করেই অনিচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, এসব অবৈধ গাড়ি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআর