ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে ড্রেনের ম্যানহোল ও সড়কের ফুটপাতে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না ঢাকনা চুরি। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় সংঘবদ্ধ চোরচক্র ও নেশাগ্রস্তরা প্রতিটি ওয়ার্ডেই ঢাকনা চুরি করছে। এদিকে ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সড়কে ৫/৭ ফুট গভীর নালায় পড়ে আহত হয়েছেন অনেকে। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা, চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রীতিমতো চুরির হিড়িক পড়েছে নগরীজুড়ে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ঢাকনা চুরির ঘটনা ঘটেছে নগরীর ১৫ ও ১৯ নাম্বার ওয়ার্ডে। চুরি যাওয়া ঢাকনাগুলো পুনঃস্থাপন না করা হলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রাতের আঁধারে নীরব থাকা অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির প্রবণতা বেশি। অনেক সড়কেই ২০ থেকে ৫০ টি ঢাকনা চুরি হয়েছে। অনেক সড়কে বিপদ এড়াতে বাঁশ দিয়ে ঢাকনা চুরি হওয়া ম্যানহোল চিহ্নিত করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। অনেক জায়গায় দুর্ঘটনা এড়াতে ম্যানহোলের মুখে একটি লাল রঙের কাপড় টাঙিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
মসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীজুড়ে ৮০০ শতাধিক ঢাকনা লাগানো হয়েছে। একেকটি ঢাকনা ৮ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কয়েকটি সাইজের হয়। এর ওজন ৪৫ থেকে ৫৫ ও ১৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটির মূল্য ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মতো। যা নতুন করে স্থাপন করতে গেলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে। সরকারি সম্পত্তি বলে এগুলো চোরেরা অল্প দামে ভাঙাড়ি বা ঢালাই কারখানায় বিক্রি করে দেয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এগুলো ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে কিনে নেয় চোরদের কাছ থেকে। পরে তারা বিকল্পভাবে পরিবর্তন করে গোপনে বেশি লাভে বিক্রি করে থাকে। আর নেশাগ্রস্তরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় স্থানীয় ভাঙাড়ির দোকানে ঢাকনা বিক্রি করে দেয়। সব মিলিয়ে ৪ শতাধিক ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে।
নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তা এবং ফুটপাতের নিচে ম্যানহোলের ঢাকনাসহ আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ড্রেনগুলো নির্মাণের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বলাশপুর, আলিয়া মাদ্রাসা, ভাটিকাশরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় একের পর এক ঢাকনা চুরি হতে থাকে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি।
প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩৪৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ম্যানহোলের ঢাকনাসহ বক্স সিস্টেমের ড্রেন। এসব ড্রেনের ম্যানহোলের ঢাকনা খোয়া যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। ঢাকনা না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নাগরিক নিরাপত্তা বিধান করাই সিটি কর্পোরেশনের কাজ। কোথায় ম্যানহোল ঢাকনা ছাড়া পড়ে আছে, তা সিটি করপোরেশনের খেয়াল রাখা উচিত। চুরি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে আর অর্থ অপচয় হবে না।
১৯ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় বলতে গেলে অধিকাংশ ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। রাস্তার মাঝে ও ফুটপাতে ঢাকনা না থাকায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকনাবিহীন এই ম্যানহোলগুলো। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেকেই।
১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিফুর ইসলাম বলেন, আমরা স্থানীয়রা ঢাকনা বিহীন ম্যানহোল গুলোতে বাঁশের খুঁটি, কাপড় টানিয়ে মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছি। কিন্তু যারা এ এলাকায় নতুন চলাচল করে তারা বিভিন্ন সময় ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পাচ্ছে। দিনে ও রাতে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।
আর চুরি ঠেকাতে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সুমনা আল মজীদ।
তিনি জানান, চুরি ঠেকাতে লোহার ঢাকনার বদলে সিমেন্ট ও কংক্রিট নির্মিত ঢাকনা প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই সবগুলো ম্যানহোলে সেগুলো বসানো হবে।
আর চুরিরোধে কোতোয়ালি থানা পুলিশকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানালেও পুলিশ বলছে জনভোগান্তি দূর করতে সিটি কর্পোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির খবর পাওয়ায় সিটি কর্পোরেশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। পাশাপাশি চুরি ঠেকাতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঢাকনা না থাকায় মাটি ও ময়লা জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে ড্রেনগুলো, এতে করে ড্রেনের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে সড়কে ময়লা পানি ভেসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে মশার উপদ্রব। ঘনঘন ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হলেও কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ এলাকাবাসী। এ থেকে পরিত্রাণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী ভুক্তভোগী নগরবাসীর।
এমআর