নিয়মিত অফিসে আসেননা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবু তালেব। তবে নিয়মিত অফিসে না আসলেও অফিস দেখভালের জন্য ২ হাজার টাকায় বহিরাগত যুবককে ভাড়া করে সরকারী অফিস দেখভাল করাচ্ছেন তিনি। অফিস ফাঁকি দেওয়ার জন্য পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবু তালেবের এমন পরিকল্পনায় তাজ্জব হয়েছেন অনেকেই।
গত বুধবার সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসে যেয়ে দেখা যায়, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবু তালেবের অফিস রুম তালাবদ্ধ। পাশের একটি রুমে বসে ফেসবুক চালাচ্ছেন এক যুবক। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার নাম কামরান।' আপনি অফিসের কি দায়িত্বে আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি এখানে ২ হাজার টাকা বেতনে মাস্টাররোলে চাকুরি করি। সকালে এসে দরজা খুলি। মাঝে মাঝে আমার কাজ থাকলে আমি দরজা বন্ধ করে চলে যাই।' আপনার স্যারসহ অন্য কর্মকর্তারা কোথায় গেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মুনিয়া ম্যাডাম ও আহসান হাবিব স্যার জরিপের কাজে বাইরে গেছেন আর আবু তালেব স্যার জেলা অফিসে।' আপনার স্যার কি নিয়মিত অফিসে আসেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্যার আজ (১৮ ডিসেম্বর) ও গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) অফিসে আসেননি এবং গত পরশু (১৬ ডিসেম্বর) সকালে একটু এসেই চলে গেছেন।
আপনি কি সরকারীভাবে মাস্টাররোলে চাকুরী করেন? আপনার বেতন কে দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আবু তালেব স্যার, হাবিব স্যার ও মুনিয়া ম্যাডাম নিজেরাই আমাকে বেতন দেন। আমার সরকারী ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ আমি সরকারী কর্মচারী না। আমি গত জানুয়ারী মাস থেকে এখানে চাকুরী করছি৷' আপনি যদি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত না হন তবে এই অফিসের জিনিসপত্র আপনার কাছে নিরাপদ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। এদিকে গত বুধবার জেলা পরিসংখ্যান অফিসে খোঁজ নিলে জানা যায়, সদর উপজেলা পরিাংখ্যান কর্মকর্তা আবু তালেব জেলা অফিসে যাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাশের অফিস সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মচারী বলেন, আবু তালেব স্যার ও অন্য দুই কর্মকর্তা নিয়মিত অফিসে আসেননা। তারা ২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে কামরান নামের ওই বহিরাগত যুবককে ভাড়া করে অফিস খোলা ও বন্ধের কাজ করান। অফিস ফাঁকি দেওয়ার জন্য সরকারী কর্মকর্তাদের এমন কর্মকান্ডে আমরা বিস্মিত হই। তবে আমরাও সরকারী চাকুরী করি এজন্য কিছুই বলতে পারিনা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, 'আমার অফিসে কে কাজ করবে বা না করবে সেটি আমি বুঝবো। আপনি জানতে চাওয়ার কে? আমার উপরের কর্মকর্তাদের কাছে আমি জবাবদিহী করবো। আপনার এ ব্যাপারে নাক না গলালেও চলবে। আপনি সাংবাদিক আপনার জানা উচিৎ এখন অর্থনৈতিক শুমারী চলছে তাই আমাকে বাইরে থাকতে হয়। এছাড়া শুমারীর কারণে অফিস দেখাশোনার জন্য ওই ছেলেকে রাখা হয়েছে।'
গত জানুয়ারী মাস থেকে ওই ছেলে চাকুরী করছেন, আর শুমারী শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে, তাহলে কিভাবে শুমারীর জন্য ওই ছেলেকে রাখা হয়েছে এবং একটি সরকারী অফিস বহিরাগত কাউকে দিয়ে দেখাশোনা করানো যায় কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে তিনি কলটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সাতক্ষীরা জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, 'সদর অফিসে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আপনি উপজেলা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।' অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সরকারীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত না হলে বহিরাগত কাউকে দিয়ে সরকারী অফিস দেখভালের সুযোগ নেই।'
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মোঃ মুনসুর রহমান বলেন, এই ধরণের কতিপয় নিয়মনীতিহীন অফিসারের জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দূর্ণাম বহন করতে হয়। তার এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কর্মকান্ডে আমরা হতবাক হয়েছি। অনতিবিলম্বে ঘটনাটির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এমআর