যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও হোয়াইট হাউজের মসনদে বসতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে তিনি শপথ নেবেন। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প যুগ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই শুরু হচ্ছে না, পরাশক্তি দেশ হিসেবে তার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়েই।
একবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হেরে গিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তাই ঐতিহাসিক অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে কৌতুহলের অন্ত নেই। আগের দিনের আঁতশবাজী উৎসবের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগে রোববার সর্বশেষ র্যালিতে অংশ নেন ট্রাম্প।
শপথ অনুষ্ঠানে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পক্ষ থেকেই প্রতিনিধিরা যোগ দিচ্ছেন। এদিকে শপথের আগেই মার্কিন প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তনও ঘটতে শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় আইনসভা ভবন অর্থাৎ কংগ্রেস ভবনে। ইউএস ক্যাপিটল বা ক্যাপিটল বিল্ডিং নামের এই ভবন ওয়াশিংটন ডিসির সিয়াটল কাউন্টিতে আবাসিক এলাকা ক্যাপিটল হিলে অবস্থিত। ভবনটি ক্যাপিটল হিল নামেও পরিচিত। ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম লনে আয়োজন করা হয়েছে শপথ অনুষ্ঠানের।
নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট ও ভাইস প্রেসিডেন্টও এদিন শপথ নেবেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টায় নিরাপত্তা ফটকগুলো খুলে দেয়া হবে।
সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে কনসার্ট। ক্যাপিটল ভবনে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে বেলা ১১টায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে দুপুরে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও সেলিব্রেটিদের মধ্যে যারা ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতা। ইতোমধ্যে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে আসছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। এদের মধ্যে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মাইলি ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টাকেশি ইওয়া ও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতিনিধিত্ব করার কথা দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং-এর। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি তাৎক্ষণিক অংশগ্রহণ এর বিষয় নিশ্চিত করেননি।
১৮৭৪ সালের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কোনো বিদেশি নেতা কখনও যোগ দেননি। সেই দিক দিয়েও এটি হতে যাচ্ছে বিরল এক অভিষেক।
২০২১ সালে জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে নজিরবিহীনভাবে অনুপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সেই বাইডেনই শুধু নন, ট্রাম্পের শপথ প্রত্যক্ষ করবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও। এমনকি ট্রাম্প যাকে নির্বাচনে হারিয়েছেন সেই কমলা হ্যারিসেরও উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
ট্রাম্প প্রশাসন থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে টেসলার ইলন মাস্ক, মেটার মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, অ্যাপলের টিম কুক, টিকটকের শু চিউ এবং গুগলের সুন্দর পিচাই-কে। যদিও শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন না সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
ভয়াবহ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক অভিষেক। ১৯৮৫ সালের পর এবারই প্রথম ক্যাপিটল হিলের বাইরে না হয়ে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ইনডোরে। তবে ঠান্ডা যত তীব্রই হোক না কেন, এরই মধ্যে লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে এখানে। রাজধানী জুড়ে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা।
এবি