"মেঘনায় আমাগো সব শেষ কইরা দিছে, আমাগো বাপ দাদার ভিটামাটি লইয়া গেছে। এহন আমাগো ভিটা টুকুও যাওয়ার পালা, এই ভিটা টুকু হারাইলে কোথাও যাওয়ার রাস্তা থাকবো না" চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন মেঘনার পাড়ের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী আবু তাহের মাঝি।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীত মৌসুমেও মেঘনার তীব্র ভাঙন চলছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে
ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের বসতঘর, ফসলি জমি ও দোকানপাট।
শিবপুর ইউনিয়নের কালিকীর্ত্তি ২নং ওয়ার্ড থেকে ৩নং ওয়ার্ডের প্রায় ২ কিলোমিটার ভাঙন কবলিত এলাকা। ভাঙনের তীব্রতায় হুমকির মুখে ভোলার খাল নামক মৎস্য ঘাট ও স্লুইচগেট বাজারসহ স্কুল মাদ্রাসা।
এদিকে মেঘনার এমন তীব্র ভাঙনেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবীতে গত ২০ জানুয়ারি একটি মানববন্ধনও করেছেন স্থানীয়রা। মানববন্ধনে দ্রুত সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবী করেন তারা।
ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা মো. জিন্নাহ, আল-আমিন, জাফরসহ কয়েকজন জানান, মেঘনা ভাঙনের তীব্রতায় হুমকির মুখের আমাদের বসতঘর ও ফসলি জমি। ইতিমধ্যে আমাদের আত্নীয়স্বজন অনেকে ভাঙনের শিকার হয়ে এখনো পযন্ত জমি কিনতে পারেনি। বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে বসবাস করেছেন তারা। অতি দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে আমাদের ঘর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
তারা আরো জানান, যখনি নদী ভাঙন শুরু হয়, তখনই পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। আবার সেই জিও ব্যাগ কিছুদিন পর স্রোতের সাথে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জন্য আমাদের বসতভিটা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
৫০ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ মিয়া জানান, মেঘনা নদীর তীর থেকে কয়েক গজ দুরেই তার বাসা। ঘরে বসেই স্রোতের তীব্রতা উপলব্ধি করতে পারেন তিনি। তাই আতংকে দিন কাটছে তার। কখন যেনো নিজের ভিটেমাটিটুকুও হারাতে হয় তাকে।
আবদুস সোবহান বলেন, আমাদের বাড়ি ঘর নদী ভাঙ্গনের মুখে, ভয়ে রাতে ঘুমাতে পাড়ি না, প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের আতংকে দিন রাত কাটাতে হয়। বর্ষাকাল এলে আমাদের ভয় আরো বেড়ে যায়। কখন যেনো পানি এসে আমাদের নিয়ে যায়।
জরিনা বেগম জানান, আমরা গরীব মানুষ, নদীতে গিয়ে যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মেঘনা নদী। নদীতে যদি এভাবে ভাঙন হয় তাহলে আমাদের কোথাও যাওয়ার উপায় থাকবে না।
এ বিষয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন আরিফ জানান, ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের দেড় কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে ৫০০ মিটার এলাকায় অতি ভাঙন দেখা দিয়েছে। আপাতত পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের আওতায় প্রায় ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। যার টেন্ডার চলমান। এতে প্রায় ১৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ৬০ মিটার এলাকা ভাঙন রোধ করতে পারবেন।
এছাড়াও ভবিষ্যতে সিসি ব্লক নির্মানের আশ্বাস দেন তিনি।
পিএম