ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও ৭ কলেজের মধ্যে দীর্ঘ প্রায় ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষ-ধাওয়া পালটা ধাওয়া শেষে নিউমার্কেট এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে৷ এসময় ঢাবি প্রক্টরের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার পর প্রক্টর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্ত হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আহ্বান জানালে প্রক্টরের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
এসময় ঢাবি শিক্ষার্থীরা- ‘বাতিল বাতিল বাতিল চাই, অধিভুক্তি বাতিল চাই’, ‘বাতিল বাতিল বাতিল চাই, ৭ কলেজ বাতিল চাই’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে দেখা যায়।
জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রো-ভিসির সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
এমন অভিযোগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করেন তারা। এ সময় প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তাতে সাড়া না পেয়ে রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে নীলক্ষেত সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের প্রবেশমুখে অবস্থান নেন।
রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে পৌঁছান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা লাঠি নিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় দু’পক্ষ ঢিল মারতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন। তবে দু’পক্ষের উত্তেজনাময় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পরে পুলিশের সহায়তায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজের সমস্যা ও ভর্তির আসনসংখ্যা কমানোর বিষয়ে ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) কাছে গেলে তিনি অশোভন আচরণ করে রুম থেকে বের করে দেন। তখন তিনি বলেন, সাত কলেজের বিষয়ে কিছু জানেন না।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ২১ দিন আগে এ নিয়ে প্রো-ভিসিকে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও সেটি তিনি পড়েননি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চেনেন না বলেই তিনি আক্রমণাত্মক ব্যবহার করেন। এরপর থেকেই মূলত তার অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
এসব ঘটনার পরেই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুর রহমান অশোভন আচরণের জন্য ঢাবি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে পাঁচ দফা দাবির কথা জানান।
শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি-
১. ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
২. সাত কলেজের শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না।
৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে।
৪. সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে।
৫. সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ছাড়া নতুন একটি অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফির টাকা জমা রাখতে হবে।