কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসনে বিএনপিঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বঞ্চিত দুই প্রার্থীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) রাতে জেলা শহরের কালিবাড়ী মোড় এলাকা থেকে বঞ্চিত মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল করিম খান চুন্নু ও খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেলের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেশান রোডে রেজাউল করিম খান চুন্নুর কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে দুই নেতাদের সমর্থকরা কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের কুশপুত্তলিকা দাহ ও ‘গণজুতা’ নিক্ষেপ করেন।
মিছিলে অংশ নেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রুহুল হোসাইন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোঃ মাহবুবুজ্জামান তালুকদারসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তন করে অন্য প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান। এ সময় মিছিল থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া হয়।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম খান চুন্নু এবং জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক ভিপি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি থেকে মনোনয়নের আশায় গণসংযোগ করে আসছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশের আরও ৩৬টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার বাড়িতে গিয়ে সহযোগিতা চান। তবে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি। অন্যদিকে তার মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে আসছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।
এর আগে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে রেজাউল করিম খান চুন্নু তীব্র সমালোচনা করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা শহরের স্টেশন রোডে নিজের ব্যাক্তিগত কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামকে দুর্বল নৈতিকতার মানুষ উল্লেখ করে বলেন, ‘শিক্ষা-দীক্ষা, পারিবারিক অবস্থানসহ সবদিক দিয়ে তিনি পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও শুধুুমাত্র অনৈতিক ও চোরাই পথ অবলম্বন করে প্রার্থীতা নিশ্চিত করেছেন।’
রেজাউল করিম খান চুন্নু আরও বলেন, ‘বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মাজহারুল ইসলাম গত ১৮ বছর আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়িতে ঘুমাত এবং সেখান থেকে উনাদের পরামর্শ নিয়ে দিনে বিএনপি করত। একটা মামলাও তার বিরুদ্ধে হয়নি। শুধু চাঁদা ও পয়সার জন্যই তার জীবন। বরং বাইরে তার কোন অস্তিত্ব নাই।’
এ বিষয়ে মনোনয়ন পাওয়া মো. মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বড় দলে অনেক প্রার্থী থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। আমার প্রতি দলের আস্থা আছে বলেই মনোনয়ন দিয়েছে। রাজনীতির শিষ্টাচার ও শালীনতা বজায় রাখা উচিত।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘আমি মনে করি, দল যোগ্য লোককেই মনোনয়ন দিয়েছে। সবাইকে শান্ত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার জন্য কাজ করা উচিত। এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, দেশনেত্রী এখন অসুস্থ। আন্দোলন-সংগ্রাম রেখে তার জন্য দোয়া করা উচিত।’
ইখা