এইমাত্র
  • শিক্ষা ও সাক্ষরতার উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেলেন জহিরুল ইসলাম
  • ৩ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এলো হাজারীবাগের ট্যানারির আগুন
  • শারীরিক প্রতিবন্ধী রনি এখন সফল উদ্যোক্তা
  • নেত্রকোনায় গোয়াল ঘরে আগুন লেগে ৩টি গরুর মৃত্যু
  • ময়মনসিংহে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেফতার ৫
  • কুয়াকাটায় পর্যটন মেলা কেন্দ্র করে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
  • পঞ্চগড়ে ভুয়া ডিবি চক্রের দুই সদস্য আটক
  • শেখ পরিবারের রক্ত থাকায় দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ: রিজভী
  • সখীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলা, দুই আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
  • ফুল বিক্রির সঙ্গে এবার পড়াশোনাও চালিয়ে যাবে আমেনা-মাইমুনা
  • আজ শনিবার, ৫ মাঘ, ১৪৩১ | ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ফুল বিক্রির সঙ্গে এবার পড়াশোনাও চালিয়ে যাবে আমেনা-মাইমুনা

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম

    ফুল বিক্রির সঙ্গে এবার পড়াশোনাও চালিয়ে যাবে আমেনা-মাইমুনা

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম

    অভাব-অনটনের কারণে সংসার চালাতে শিশুকাল থেকেই আমেনা ও মাইমুনা দুই বোন বরিশাল নগরীতে ঘুড়ে ঘুড়ে ফুল বিক্রি করে যাচ্ছেন। আর সেই ফুল বিক্রির টাকা দিয়েই চলে তাদের অভাবের সংসার।

    আট-দশ বছরের এই দুই শিশুকন্যার উপার্জন দিয়েই তাদের মা নুরুন্নাহর বেগম কোনো ভাবে সংসার চালানোর কাজটি করছেন।

    জীবিকার তাগিদে ফুল বিক্রি করতে নেমে দুই বোনের পড়াশোনাও বন্ধের উপক্রম। তারপরও সংগ্রামের জীবনে জীবিকাই যে মুখ্য। তাই প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে সকাল নগরীল মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও রাতে ঐতিহ্যবাহী বেলস্ পার্ক প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রিই তাদের কাছে মূল আয়।

    তবে হঠাৎ করেই যেন ভাগ্য সহায় হয়েছে আমেনা ও মাইমুনার। গেল পৌষের এক সন্ধ্যায় বেলস্ পার্ক প্রাঙ্গণে হাঁটতে যায় একজন মানবিক সমাজসেবক ও বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ। চোখ যায় শীতে কাঁপতে থাকা শিশু দুটির দিকে। বিবেকের তাড়নায় শিশু দুটিকে কাছে ডেকে তাদের বিষয়ে জানতে শুরু করেন সমাজসেবার এই কর্মকর্তা। প্রাথমিকভাবে জানতে পারেন, শিশু দুটির বাড়ি নগরীর কীর্তনখোলা নদীতীরবর্তী রসূলপুর বস্তিতে। ছয়জনের পরিবারের তাদের বাবা তেমন একটা কাজ কর্ম করেন না। বড় ভাইও দায়িত্বহীন ব্যক্তি। আর এরপরে আমেনা ও মাইমুনা দুই বোন; যারা সংসারের হাল ধরতে গিয়ে ফুল বিক্রি করেন ঘুড়ে ঘুড়ে। তাদের পর ৬-৭ মাস বয়সী আরও এক ছোটভাই রয়েছে।

    সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়গুলো জানার পর প্রাথমিকভাবে শিশু দু জনকে শীতের কাপড় হিসেবে দুটি কম্বল দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এর পাশাপাশি তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করি। তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে শিশু দুটির পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলি। এরপর তাদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে ভর্তি করে দেই, তারা স্কুলেও যাচ্ছে। পাশাপাশি জীবিকার জন্য ফুলেরও ব্যবস্থা করে দেই। তিনি আরো বলেন, অসহায় দুই বোনকে শীতে কাপতে দেখে আমার চোখে পানি চলে আসে। তার পর আমি চিন্তা করতে থাকি তাদের জন্য কি করা যায়। এখন থেকে আমেনা ও মাইমুনা এই দুই বোনের পড়াশুনার দায়িত্ব আমার।

    সমাজকর্মী কামরুন্নাহার ইভা বলেন, শিশু দুটির বিষয়ে সাজ্জাদ পারভেজ স্যার অবগত হওয়ার পর ওদের শীতের পোশাক দেওয়ার পাশাপাশি আমাকে খোঁজ নিতে বলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রসূলপুর কলোনীতে বাসায় ভাড়া নিয়ে থাকেন আমেনা ও মাইমুনার পরিবার।

    তিনি বলেন, আমেনা ও মাইমুনার বাবা মাঝেমধ্যে মাছ বিক্রি করে থাকেন, তবে বেশিরভাগ সময়েই কাজ থাকে না তার। আর ওদের বড় ভাইও নিয়মিত কোনো কাজ করে না। ফলে সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকে। এ অবস্থায় কিছু দিন ধরে বেলস্ পার্কে সামান্য কিছু টাকার ফুল এনে বিক্রি শুরু করেন আমেনা এবং মাইমুনা। আর অভাবের কারণে আমেনা ও মাইমুনা নিয়মিত স্কুলেও যায় না।

    তিনি বলেন, বিষয়গুলো সাজ্জাদ পারভেজ স্যারকে জানালে তিনি ৮নং চকবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আমেনা ও মাইমুনাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। সেইসঙ্গে স্থানীয় একটা টেইলার্সে ওদের দুইবোনের স্কুল ড্রেস বানাতে দেন। পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ওদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিক্রির জন্য ফুলের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তাদের পড়াশুনার দায়িত্ব নেন। সাজ্জাদ পারভেজ ভাইর সহযোগীতায় তারা আগের থেকে অনেক বেশি ফুল বিক্রি করতে পারবে, অন্য কাজগুলোর সঙ্গে সেই ব্যবস্থা সাজ্জাদ স্যার নিজের উদ্যোগেই করে দিয়েছেন। আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতেও কোনো বেগ পেতে হবে না।

    এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ছোট ছোট মেয়ে দুটি শিক্ষার আলো পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা থেকেই ওদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এটাই বড় প্রাপ্তি আমার। আমি তাদের পড়াশুনার জন্য যা যা দরকার তা করার চেষ্টা করে যাবো।

    তিনি আরো বলেন, আমাদের আশপাশে এরকম সুবিধাবঞ্চিত অনেক আমেনা ও মোহাইমিনা আছে, তাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

    বিষয়টি নিয়ে একটি শিশু সংগঠনের এক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে সততা-নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন সাজ্জাদ পারভেজ ভাই। তিনি আর্ত-মানবতার সেবায় কাজ করে ইতোমধ্যে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। বিশেষ করে, অসহায় মানুষকে নিয়ে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

    জনবান্ধব ও সাংবাদিক বান্ধব এই সমাজসেবা কর্মকর্তার ব্যতিক্রম কর্মোদ্যম, সৎ ও দায়িত্বশীলতা বরিশাল জেলায় দিন দিন যোগ যোগ হচ্ছে সহযোগিতার নতুন মাত্রা। তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতায় প্রতিদিন বরিশাল জেলা সমাজসেবা অফিসের সুনামের মাত্রা যোগ হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে অসহায় মানুষের সহযোগিতার হাত। সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরীর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজের।

    সাজ্জাদ পারভেজ ১৯৯৭ সালে বরিশাল সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সরকারি চাকুরি করলেও তিনি নিজেকে সরকারি অনুধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার এস এসসির ৮৪ ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে ৮৪ ইভেন্ট নামের গ্রুপের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের সহায়তার কাজ করে যাচ্ছেন।

    এই গ্রুপের মাধ্যমে অবহেলিত মানুষ দেখলেই এগিয়ে যান তিনি। তার এসব ভালো কাজ দিয়ে তিন বার অর্জন করেছেন জাতীয় শ্রেষ্ঠ প্রমোশন পদক। এছাড়াও ২০২০ সালে পেয়েছেন শুদ্ধাচার পুরস্কার। কয়েক ধাপে পদন্নোতি পেয়ে ২০২৪ সালে জেলা সমাজসেবা সহকারি পরিচালক হিসেবে পদন্নোতি পেয়ে বরিশাল অফিসে যোগদান করেন।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…