রাসলীলা কীর্ত্তণ উপভোগ করতে দুুর-দুরান্ত থেকে আসা হাজারও ভক্তের ঢলে মূখরিত ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডপ রাধাগোবিন্দ সার্বজনীন মন্দির প্রাঙ্গণ। দ্বিতীয় বারের মতো এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাতদিন ব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা অনুষ্ঠানে রাসলীলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ভোর থেকে রাসযাত্রা অনুষ্ঠানে মহানাম যজ্ঞা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বুধবার শীতের রাতেও লীলাকীর্ত্তন প্রাঙ্গনে ভক্তের সমাগমে মূখরিত হয়ে উঠেছে। ভক্তরা পরিবার-পরিজনসহ দুর-দুরান্তর থেকে লীলা কীর্ত্তনে এসে তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের দেখা হওয়ায় অনেকটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মনে হয় অনেক অনেক দিন পর নিকট আত্মীয় স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবীদের দেখা মেলে এই অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে। যেন এক মিলন মেলায় পরিনিত হয়েছে।
সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে দুর-দুরান্তর ভক্তরা যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করতে প্রশাসনের কট্টর নিরাপত্তার ছিল অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন। বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে সফল করতে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ ও গ্রাম পুলিশসহ কমিটির লোকজনও কঠোর ভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
বুধবার রাত ৮টায় রাসলীলা অনুষ্ঠান গিয়ে দেখা গেছে, গোরকমন্ডপ রাধাগোবিন্দ সার্বজনীন মন্দির কমিটি ও ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন গত দুই বছর ধরে রাসযাত্রা অনুষ্ঠানটি পালন করে আসছে বলে জানান অনুষ্ঠান পর্ষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস ও ও সাধারণ সম্পাদক তপন চন্দ্র বিশ্বাস ।
এই লীলাকীর্ত্তন উপভোগ করতে দুর-দুরান্তর থেকে আসা হাজার হাজারও ভক্তের মনকে জয় করেন শিল্পীরা। মঞ্চে এই চার গুণী লীলাশিল্পী নিজেই কাদঁলেন আবার হাজারও ভক্তদেরকেও কাদাঁলেন বগুড়া থেকে আগত সারা জাগানো লীলাশিল্পীরা।
লালমনিরহাট সদর থেকে দীলিপ রায় ও নাগেশ্বরী থেকে আসা নারী ভক্ত বীণা রানী জানান, আমরা রাসযাত্রা অনুষ্ঠানে এসে লীলা কীর্ত্তন শুনে মুগ্ধ হয়েছি। এই অনুষ্ঠানে এসে অনেক ভক্ত তাদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের দেখা পেয়ে খুশী হয়েছেন। এই দুই ভক্ত জানান, এই অনুষ্ঠানটি অনেক বড়।
প্রভাষক শংকর চন্দ্র সেন জানান, এই অনুষ্ঠানে এসে অনেক ভক্তই তার আপনদের দেখা পান এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এই লীলা কীর্ত্তন প্রাঙ্গণে দুর-দুরান্তর থেকে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।
এর আগে ১৫ নভেম্বর রাতে সাতদিন ব্যাপী রাসযাত্রা অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের ধর্মীয় আলোচনা, ভজন সংগীত ও লীলা কীর্তন পরিবেশন হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে অধিবাসের মধ্য দিয়ে নামযজ্ঞ মহোৎসব শুরু হয় এবং শুক্রবার বিকালে মোহন্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
রাধাগোবিন্দ রাসযাত্রা উদযাপন পরিষদের পৃষ্ঠপোষক ইউপি সদস্য শ্যামল চন্দ্র রায় ও সঞ্জিত কুমার জানান, এই সাতদিন থেকে রাসযাত্রা অনুষ্ঠানে দুর-দুরান্তের ভক্তরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মহানামযজ্ঞ মহোৎসব ও অপ্রাকৃত লীলা কীর্তন উপভোগ করেছে। এই সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণ ভাবে হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন, ফুলবাড়ী থানা পুলিশ ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ছানোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার রাত থেকে প্রায় দিনেই রাসযাত্রা অনুষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। এই সাতদিন পুলিশের পাশাপাশি গ্রাম পুলিশও অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় দায়িত্ব পালন করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে এই সাতদিন শান্তিপূর্ণ ভাবে রাসযাত্রা অনুষ্ঠানে পূজা অচনাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারে সে ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর ছিলাম। আশা করি আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাতদিন ব্যাপী রাসযাত্রা উদযাপনের সমাপ্তি ঘটবে।
এআই