এইমাত্র
  • নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ: রিজভী
  • রিজার্ভ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই: গভর্নর
  • এবি পার্টির চেয়ারম্যান হলেন মঞ্জু, সেক্রেটারি ফুয়াদ
  • সীমান্তে ফের উত্তেজনা, বিএসএফের নতুন সিদ্ধান্ত
  • ভৈরবে ট্রেনের টিকেটসহ দুই কালোবাজারি আটক
  • লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলকে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ বললেন বাইডেন
  • প্রথম চীন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • চরফ্যাসনে মেছো বিড়াল উদ্ধার
  • সিরাজদিখানে ফ্লাইওভারের নিচ থেকে অজ্ঞাত নারীর গলিত লাশ উদ্ধার
  • ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • আজ শনিবার, ২৮ পৌষ, ১৪৩১ | ১১ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    আন্দোলন দমনে অস্ত্র সরবরাহকারী যুবলীগ নেতা নাছির, এখন বিএনপির ছত্রছায়ায়!

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ এএম

    আন্দোলন দমনে অস্ত্র সরবরাহকারী যুবলীগ নেতা নাছির, এখন বিএনপির ছত্রছায়ায়!

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ এএম

    কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ভয়ঙ্কর অস্ত্রবাজি আর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দিন। অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করেছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, আন্দোলনরত ছাত্রদের নিয়মিত ফেসবুকে হত্যা ও পাকিস্তানে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন নাছির উদ্দিন।

    তবে সরকার পরিবর্তনের পর দৃশ্যপট বদলে গেছে। এখন তিনি বিএনপির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

    নাছির উদ্দিন কক্সবাজার জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত নাছির, তার নির্দেশেই এই সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। এছাড়াও নাছির জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সোহেলের ক্যাশিয়ার। চাঁদাবাজির টাকা তোলার দায়িত্ব পালন করতেন নাছির।

    অভিযোগ রয়েছে, জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য ভাড়া করা রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীদের তার পরিচালিত ঘেমলা রিসোর্টে রাখতেন নাছির। জুলাইয়ের ২০ তারিখ থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে ১৩ রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীদের রাখা হয়েছিল, সূত্রে জানা গেছে।

    গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে মহেশখালি ও ঈদগাঁও থেকে অন্তত ২৮টি দেশীয় বন্দুক, একটি বিদেশি পিস্তল এবং তিন হাজার গুলি সংগ্রহ করেছিলেন নাছির। এসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেন তিনি, যার মাধ্যমে আন্দোলনরত ছাত্রদের দমন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

    এখানেই শেষ নয়। নাছির নিয়মিত ফেসবুকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে পোস্ট করতেন। এই পোস্টগুলো ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করলেও, সরকার পরিবর্তনের পর নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে তিনি দ্রুত এসব পোস্ট ডিলিট করে দেন।

    ভুক্তভোগীরা হোটেলের মালিক মনজুর আলম জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান তার হোটেল দখল করে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় তার ভাড়াটিয়া বের করে দেন। মুজিবের পক্ষে তার আপন ভাগিনা নাছির উদ্দিন এ চাঁদার টাকা দাবি করেন। পরে টাকা দিতে না পারায় নাছির উদ্দিন হোটেল নাম শাহ আমিন রিসোর্ট পরিবর্তন করে ঘেমলা রিসোর্ট সাইনবোর্ডে দিয়ে হোটেলটি পরিচালনা করে আসছেন। সরকার পতনের পর হোটেলে গেলেও এখনো তিনি হোটেলে যেতে পারেননি। নাছির তার কাছে ১ কোটি টাকা বা দুই গণ্ডা জায়গা দাবি করেন।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির জানান, তিনি তার মামা মনজুরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার দাবি, ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকাদারের কবল থেকে বাঁচিয়ে হোটেলটি তিনি কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে দখল করেছেন। এজন্য তাকে আরও পাঁচ বছর হোটেলটি ভোগ করতে দিতে হবে এবং শহরের ভিতরে ২ গণ্ডা ৪ শতক জায়গা দিতে হবে। এই বিষয়টি মুজিবুর রহমান বিচার করে দিয়েছেন বলে দাবি নাছিরের।

    নাছির বলেন, সম্প্রতি আমি মামা মনজুর বাড়াবাড়ি করার বিষয়টি বিএনপির কয়েকজন নেতাদের জানালে তারা মামাকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যদি মনজুর বেশি বাড়াবাড়ি করেন, তবে তিনি হোটেল আর দেবেন না। হোটেলের মৌজা ও দাগে তিনি ৪ শতক বেদখল জায়গা কিনে রেখেছেন যাতে হোটেল দাবি করতে পারেন।

    সরকার পরিবর্তনের পর অবস্থান বদল:

    আওয়ামী লীগের এক সময়ের তুখোড় কর্মী নাছির, সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক সুবিধার জন্য বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান।

    অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি এবং ছাত্রদলের কিছু নেতা তাকে রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। এমনকি নাছিরের দখলে থাকা হোটেলের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছেন তারা।

    নাছির দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের পরিচয় ছাড়াই হোটেল-মোটেল জোন থেকে মাসে ১৫-২০ লাখ টাকা আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এই আর্থিক প্রভাবের কারণে সদর থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টরা তার কথায় ওঠবস করেন।

    অস্ত্র মামলা ধামাচাপা: পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন:

    নাছিরের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক অস্ত্র মামলা থাকলেও, রহস্যজনক কারণে পুলিশ এসব মামলা এড়িয়ে চলেছে।

    কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই নাছিরকে গ্রেফতার করে দুটি ওয়ারেন্টসহ থানায় সোপর্দ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অস্ত্র মামলাগুলো গোপন রেখে ২০১৯ সালের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায়।

    এই ঘটনায় কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের এমন রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

    নাছির উদ্দিনের অতীত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বর্তমান অবস্থান বদলের কৌশল নিয়ে কক্সবাজারের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে। একদিকে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করা নাছির, অন্যদিকে বিএনপির ছত্রছায়ায় থেকে নিজের শক্তি পুনর্গঠন করছেন।

    সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, একজন অস্ত্রবাজ কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না?

    কক্সবাজার সদর থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইলিয়াস বলেন, এই নাছিরের উদ্দিন সম্পর্কে বিজ্ঞ আদালত বিস্তারিত নির্দেশনা চেয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

    এআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…