প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন গেলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। একে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মেরূকরণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। আর এ সফরে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বহুমুখী বিষয়ে। এছাড়া আগামী মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের ব্যাপারেও বেশ আগ্রহী বেইজিং। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বিনিয়োগ, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা স্বাভাবিক পথে এগিয়ে নেয়ার বার্তা দিচ্ছে চীন।
৫০ বছর পার হতে যাচ্ছে ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের। বৃহৎ প্রকল্প, অবকাঠামো খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আর ব্যবসা-বিনিয়োগে বাংলাদেশের বড় অংশীদার এখন চীন। যদিও গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় ক্ষমতার পালাবদলের পর নয়া বাস্তবতায় দুই দেশের সম্পর্কের মেরূকরণ কেমন হয়, তা নিয়ে জল্পনা ছিল কমবেশি।
তবে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি তা আরও জোরদারের ব্যাপারে এরই মধ্যে অবস্থান স্পষ্ট করেছে বেইজিং। সবশেষ রোববার (১৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর বার্তা দেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। পরদিন সোমবার (২০ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নিজের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে বেইজিং যান তৌহিদ হোসেন। এ সফরে গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে অর্থনীতি, বাণিজ্য, ঋণের সুদ কমানো, তিস্তা প্রকল্প, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ, বিভিন্ন প্রকল্প আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে এই সফর। তবে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার ক্ষেত্রে ঢাকায় নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় থাকতে পারে বেইজিং, এমন মত দিচ্ছেন কেউ কেউ।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান বলেন, এই সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সফরে বাণিজ্য, ঋণসহ নানা বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গতানুগতিক সম্পর্ক রাখবে চীন। আলোচনাও চলবে। তবে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার ক্ষেত্রে চীন নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় থাকতে পারে।
এদিকে, আগামী মার্চে বেইজিংয়ে ২৫ দেশের জোট বিওএও ফোরাম ফর এশিয়ার সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। ড. ইউনূসের উপস্থিতি নিশ্চিতে বেশ আগ্রহী বেইজিং। যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান বলেন, এটি একটি হাইপ্রোফাইল ইভেন্ট। দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এটি।
প্রথম দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীনযাত্রা, বাংলাদেশের আঞ্চলিক কূটনীতিতে ভারসাম্য আনার ইঙ্গিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।