যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। তবে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে স্ক্যানিং ও মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন। এই সুযোগে বন্দরের অভ্যন্তরে মাদক কারবারিরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘটছে চুরির ঘটনাও। নিরাপত্তা সংস্থা আনসার, পিমা, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ এই তিন সংস্থার কর্মীরা থাকার পরও চলছে মাদকের কারবার। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অপরাধীরা।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মাদক পাচারের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে মামলা হয়েছে। এদিন বিকেলে বন্দরের ৫ নম্বর গেটে চোরাকারবারিকে ধাওয়া দিয়ে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেন বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্যরা। তবে পালিয়ে যায় পাচারকারী। এর আগে গত ২ জুলাই বন্দরের কাঁচামাল ইয়ার্ডে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ট্রাক থেকে উদ্ধার করা হয় ৯৯ বোতল ফেনসিডিল।
বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থা আনসার পিসি হেলালুজ্জামান বলেন, তাদের নিরাপত্তাকর্মীরা বন্দরে টহল দেওয়ার সময় দেখতে পান, একটি ট্রাকের পাশে সন্দেহভাজন কয়েকজন ঘোরাঘুরি করছে। পরে তাদের ধাওয়া করলে একটি ব্যাগ ফেলে কৌশলে তারা পালিয়ে যায়। পরে ব্যাগে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। বন্দর কর্মকর্তাদের নির্দেশে ফেনসিডিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং পাচার রোধে ১৭৫টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবে বন্দরের একটি সূত্র বলছে, তদারকির গাফিলতি থাকায় মাদক পাচারের ঘটনা ঘটছে। ফলে অপরাধী ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সাধারন সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, চোরাকারবারিরা কখনো ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকে আবার কখনো সীমান্ত পথে ফেনসিডিল নিয়ে বন্দর এলাকায় অবস্থান করে। পরে কৌশলে বিভিন্ন পণ্যবাহী বাংলাদেশি ট্রাকে ফেনসিডিল তুলে দেয়। আর হয়রানির শিকার হন চালক, ট্রাক মালিক, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা।
এ ক্ষেত্রে বন্দরে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন জরুরি বলে মনে করেন বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি উজ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, প্রায় ৯ মাস ধরে বন্দরের ৩টি স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট। এর কারণে সহজে মাদক বন্দরে আসছে। স্ক্যানিং মেশিন দ্রæততম সময়ে চালু করা দরকার।
বন্দরের নিরাপত্তায় ১৬৩ জন আনসার, ৪২ জন আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা পিমার ১২৯ জন কর্মী আছেন। এ ছাড়া রয়েছে ৩৭৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা দিয়ে বন্দরের চারপাশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া সরকারের গোয়েন্দাও রয়েছে সেখানে। এরপরও ঘটছে চুরির ঘটনা। চলতি সপ্তাহে খোদ বন্দরের ডিটিএম অফিসে বসানো দুটি ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন চুরি হয়। তবে এই অপরাধী এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যদিও এ ঘটনায় নিরাপত্তা সংস্থা পিমার সদস্যদের বিরুদ্ধে বন্দর প্রশাসন পুলিশে অভিযোগ করেছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়মিত তদারক করা হলে এবং বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বশীল হলে বন্দর অভ্যন্তরে মাদকের কারবার বন্ধ সহজ হবে।
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের যে স্থানটি থেকে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিলনা। তাই অপরাধী সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এসব ঘটনা এড়াতে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তায় আনসাররা কাজ করছেন। বন্দরের ৩টি স্ক্যানিং মেশিন নষ্টের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে গত ১৪ নভেম্বর নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বেনাপোল বন্দরে কার্গো টার্মিনাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বন্দরের মধ্যে কাস্টমসের স্ক্যানার মেশিন নস্ট থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেনাপোল বন্দরে অন্তত দুটি স্ক্যানার মেশিন থাকা দরকার। এখানে একটি স্ক্যানার আছে। সেটিও নষ্ট। মেশিনটি নষ্ট হওয়ায় প্রচন্ড জনজট সৃষ্টি হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো: কামরুজ্জামানকে ডেকে তিনি বলেন, ‘আপনি কাল সকালে ঢাকাতে গিয়ে বসে থেকে স্ক্যানার মেশিনটি ঠিক করে বেনাপোলে ফিরবেন।’
এইচএ