‘গাড়ি চলে না, চলে না রে/ পার্সগুলো ক্ষয় হয়েছে/ ইঞ্জিনে ময়লা ধরেছে’ বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের দেহতত্ত্বের গানটি কক্সবাজারের পেকুয়ায় রব্বত আলী পাড়া সড়কের বেলায়ও প্রযোজ্য বটে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানব দেহ যেমন ক্ষয় হতে শুরু করে, তেমনি এ সড়কে একবার কোনো যানবাহন চলাচল করলে তার ঠিকানা হয় ওয়ার্কশপে। তাই এ পথে চলাচলকারী চালকরা মনে করেন, দুর্ভোগের এ সড়ক যেন উপজেলাবাসীর জন্য নরকের পথ। চকরিয়া-পেকুয়ার তথা সারা দেশের সঙ্গে চিংড়ি রাজ্য বলে খ্যাত পেকুয়াবাসীর চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। সংস্কারের অভাবে সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘেরা চকরিয়া-পেকুয়া চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী রব্বত আলী পাড়া অবস্থিত হলেও যেতে হয় এ পথ মাড়িয়ে।
জানা গেছে, পেকুয়ায় ২০ বছর ধরে যানবাহন চলাচল নেই সবুজ বাজার-রব্বত আলী পাড়া সড়কে। বর্তমানে সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা এখন পাঁয়ে হেঁটে যাওয়া আসাও অনেকটা কষ্টদায়ক। রাজাখালী ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো অন্যতম যাতায়াত মাধ্যম রব্বত আলী পাড়া সড়ক ঘুরে এমন বেহাল দশা চোখে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২৫ বছর পূর্বে গ্রামীণ এ সড়কের সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও উন্নত করতে সে সময় সড়কের পাকাকরণ হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ সড়কে ইট বিছিয়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে। তবে ওই সময় থেকে গ্রামীণ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে আর কোন উন্নয়ন কিংবা পুনঃসংস্কার কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। সবুজ বাজার পূর্ব দিকে সড়কটি প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তৃত। সবুজ বাজার থেকে রব্বত আলী পাড়া হয়ে সড়কটি পূর্ব দিকে পাউবোর বেড়িবাঁধে গিয়ে মিশেছে। লালজান পাড়ার ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকের সবুজ বাজারসহ রাজাখালী ইউনিয়নের মূল কাঠামোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এটি অন্যতম যাতায়াত মাধ্যম। তবে কালের পরিক্রমায় এটি এখন সড়ক নয় যেন মৃত্যুফাঁদ। এক সময় গাড়ি চলাচলের জন্য উপোযোগী ছিল। এখন অধিকাংশ স্থানে সড়কটি খানাখন্দকে ভরপুর। দুই কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত এক কিলোমিটার ইট নেই। ওই অংশে পরিনত হয়েছে কাঁচা সড়কে।
শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের বেশিরভাগ স্থানে ইট উঠে গেছে। রব্বত আলী পাড়ার পূর্ব অংশে বেড়িবাঁধ থেকে হাজি আহমদুর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত সড়কের ইট নেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি সেকান্দর আলীর বাড়ি হয়ে রব্বত আলী পাড়ায় রাজাখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সিকদারের বাড়ির সামনে হয়ে সবুজ বাজার পর্যন্তেও সড়কের ইট উঠে গেছে। মাওলানা মনজুর আলমের বাড়ির সামনেও সড়কটির নাজুক অবস্থা। ফজল কাদেরের বাড়ি থেকে রিয়াজ খান রাজুর বাড়ি পর্যন্ত লবণ মাঠ অংশে ভাঙাচুড়া কিছু ইট আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মনজুর আলম, মোয়াজ্জেম হোসেন সিকদার, লালজান পাড়ার গোলাম রহমান পুতু বলেন, ২৫ বছর আগে এ রাস্তায় ইট বিছানো হয়েছিল। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত আর কোন ধরণের সড়কে কাজ হয়নি। পানির উৎস ও নিস্কাশনের জন্য ভেতরে একটি খাল আছে। জোয়ার ভাটার পানির প্রবাহ মাঝে মধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষার সময় পানির স্রোত রাস্তার সাথে ধাক্কা লাগে। পুর্ব অংশের লালজান পাড়া, রায়বাপের পাড়া, রব্বত আলী পাড়া, টেকঘোনা, মাঝির পাড়া, পশ্চিম অংশের মৌলভী পাড়া, চড়িপাড়া, বদিউদ্দিন পাড়া, বকশিয়াঘোনা, সুন্দরী পাড়াসহ রাজাখালী ইউনিয়নের বিপুল মানুষ এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম রহমান বলেন, সড়কটি খবুই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজ বাজার রাজাখালীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এয়ার আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়, এয়ার আলী খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, সবুজ বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রাখতে সড়কটি একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। এছাড়া সবুজ বাজারের সাথে টইটং ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ সহজ করতে এ সড়কের বিকল্প নেই। আমার ওয়ার্ডবাসী সহ ইউনিয়নের বিপুল জনগোষ্ঠী সড়কটির কারণে উন্নয়ন বৈষম্যের মধ্যে আছে। আমরা সড়কের দ্রুত সংস্কার চাই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়ার প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, আসলে যেসব সড়ক উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে সে সবের বিষয়ে স্ব স্ব জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। তাঁরা বরাদ্দের জন্য কাগজপত্র চুড়ান্ত করে দেন। এ সড়কটির ব্যাপারে লিখিত আবেদন জানালে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ বরাদ্দের জন্য অবহিত করব।
এআই