মাদারীপুর-১ (শিবচর) সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বালু ফেলার জন্য অধিগ্রহণকৃত খাস জমি ভূয়া মালিক সাজিয়ে ৯’শ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের তিন সদস্যর একটি দল অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে।
গত ৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) এর উপ-পরিচালক নারগিস সুলতানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধে ৯’শ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যর একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। যার দল নেতা হিসেবে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মো.খায়রুল হক ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান ও উপ-সহকারী পরিচালক মো.সাইদুর রহমান অপু।
গত ২০ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের ই/আর তদন্ত-১/০০৩/২০২৫/প্রকা, ঢাকা স্মারকে উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) ও অনুসন্ধান কমিটির প্রধান মো.খায়রুল হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত চরের খাস জমির সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সাবেক চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ও অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু প্রকল্পের চরের খাস জমি ভুয়া মালিক সাজিয়ে ৯০০ (নয়) কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে গত ৭ জানুয়ারি তিন সদস্যর একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। যেখানে সদস্য হিসেবে আমি রয়েছি। আমাদের কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক মো.খায়রুল হক গত ২০ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের ই/আর তদন্ত-১/০০৩/২০২৫/প্রকা, ঢাকা স্মারকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি/রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য চাহিদা পত্র দিয়েছে। আমরা আগামী ৪৫ কার্য দিবসের মধ্যে আমাদের অনুসন্ধানের প্রতিবেদনের কাজ শেষ করব, সে ভাবেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।
দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসনের জন্য তোলা বালু ফেলতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ক্রয় করা হয়েছিল ৯০০ (নয়’শ) কোটি টাকার জমি। সেই জমির বড় অংশ নদীর পানিতেই বিলীন হয়ে গেছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে থাকা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তখন জমিগুলো ক্রয়ের কোনো প্রয়োজন ছিল না। ক্রয় করতে হয়েছে সাবেক চিফ হুইপ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের কৌশল ও চাপে। তখন আন্দোলন করে জমি কিনতে বাধ্য করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই জমির একাংশের ভুয়া মালিক সাজিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কারণ, চরের জমির কোনো মালিক আসলে ছিলেন না। চরের সব জমিই ছিল খাস খতিয়ানভুক্ত। জমির কোনো কোনো প্রকৃত মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকার একাংশ দিয়ে বাকিটা আত্মসাৎ করা হয়েছে। খাস জমি অধিগ্রহণে একটি বড় শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িয়ে পড়েছিল।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পাশের জেলা শরীয়তপুরের চরে স্থানীয় লোকজনকে ৩৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বালু ফেলা হয়েছিল। মাদারীপুরেও একই প্রক্রিয়ায় বালু ফেলা শুরু হয়। কিন্তু মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের এমপি ও চীফ হুইপ নূর-ই-আলম লিটনের ছত্রছায়ায় স্থানীয় কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষকদের খেপিয়ে তোলেন। তারা জমি অধিগ্রহণ করে বালু ফেলার জন্য চাপ দেন।
২০১৭ সালে সরকারিভাবে জমি অধি গ্রহণের ক্ষেত্রে দামের তিন গুণ ক্ষতিপূরণের আইন পাস হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে তখন উঠে পড়ে লেগে যায় শিবচরের খাস জমি ভুয়া মালিক সাজিয়ে অধিগ্রহণ সিন্ডিকেট। যাদের পেছনের শক্তি ছিল নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। স্থানীয়দের পরিকল্পিত বিক্ষোভের মুখে সেতু বিভাগ বাড়তি জমি কেনা বাবদ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা যুক্ত করে বিশেষভাবে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে পরের কয়েক বছরে ৯৬৪ হেক্টর চরের জমি কেনা হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের বালু ফেলার জন্য অধিগ্রহণকৃত খাস জমি ভূয়া মালিক সাজিয়ে ৯’শ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের দেওয়া চিঠির কথা স্বীকার করে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা.ইয়াসমিন আক্তার জানিয়েছেন, ‘সংশ্লিষ্ট ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
এমআর