হাওয়াই মিঠাই লাগবে? হাওয়াই মিঠাই, মিষ্টি, নরম, গোলাপি, হাওয়াই মিঠাই। এমন হাঁক-ডাক দিয়ে স্কুল-কলেজ, পাড়া-মহল্লা ও শহরের অলিগলিতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে মোহাম্মদ আব্দুল রশিদ (৭০)। তার হাঁক-ডাক শুনেই ছুটে আসে শিশু-কিশোররা।
গ্রাম-গঞ্জে ফেরি করে কটকটি, হাওয়াই মিঠাই, নারকেল আইসক্রিমসহ এসব জিনিস বিক্রির দৃশ্য এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। কালের পরিক্রমায় নানা ধরনের লোভনীয় জিনিস শিশুদের হাতের নাগালে আসায় কদর কমেছে এসব জিনিসের। এরপরও কিছু কিছু অঞ্চলে ধানের মৌসুম ও বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, বিজু, সাংগ্রাই, বৈসাবিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মেলাতে হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায়।
গ্রাম বাংলার প্রিয় খাবার এই হাওয়াই মিঠাই ৩০ বছর ধরে বিক্রি করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন মোহাম্মদ আব্দুল রশিদের মতো দিন এনে দিন খাওয়া কিছু মানুষ। হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে শিশু, কিশোরদের মন জয় করার চেষ্টায় সে অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের কোনামাঠি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের লাঠির একপাশে ব্যাগ ও আরেক পাশে স্বচ্ছ কাচের বাক্স। এতে রয়েছে হাওয়াই মিঠাই। তার পিছে রয়েছে গ্রামের দূরন্ত শিশু-কিশোররা। তার হাতে রাখা ঘণ্টা বাজিয়েই নজর কাড়ছেন শিশু-কিশোরদের। ঐতিহ্যবাহী এই হাওয়াই মিঠাই দেখতে গোল গোল। মিষ্টি স্বাদ এবং মুখে দিলেই নিমিষে মিলিয়ে যায়। তুলার মতো তুলতুলে গোলাপী রঙের হাওয়াই মিঠাই।
শিশুদের প্রিয় এ হাওয়াই মিঠাই এখন কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার এলাকা, গ্রামে গ্রামে বা কোন মেলা উৎসব, সভা হয় সেখানেই হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে হাজির হন মোহাম্মদ আব্দুল রশিদ। ৩০ বছর ধরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। অন্য পেশায় আরও লাভজনক হলেও তবুও ছাড়ছেন না মিঠাই বিক্রির কাজ। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে আকড়ে ধরে জীবিকাও নির্বাহ করছেন তিনি।
হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা মোহাম্মদ আব্দুল রশিদ জানান, ৩০ বছর ধরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এত কষ্ট করে বেঁচে আছি তবুও কারো কাছে হাত পাতি না। হাওয়াই মিঠাইতেই জীবন, এতেই চলে আমাদের সংসার। হাওয়াই মিঠাই বানাতে বেশি কিছু লাগে না। একটি মেশিন, আর উপকরণ হিসেবে স্পিরিট, চিনি, তেল আর হালকা ভোজনযোগ্য রঙ। চলন্ত মেশিনের উপরিভাগের থালার মতো জায়গার মধ্যে ছিদ্রতে দেওয়া হয় এই উপকরণ। মেশিনের ঘূর্ণিতে যে তাপ উৎপাদন হয় তা থেকে রূপ নেয় হাওয়াই মিঠাই।
মোহাম্মদ আব্দুল রশিদ আরও জানান, এক কেজি চিনি দিয়ে প্রায় ৫৫০ থেকে ৭০০ হাওয়াই মিঠাই বানায়। এরপর সকাল হলে গ্রামাঞ্চলে হেঁটে হেঁটে মিঠাই বিক্রি করি। প্রতি প্যাকেট হাওয়াই মিঠাই ২০ টাকা করে বিক্রি করছি। নগদ টাকা দিয়েও বিক্রি করি, আবার চুল ও ভাঙাচোরা মোবাইল দিয়েও বিক্রি করি। তবে মোবাইল ও চুল দিয়ে বিক্রি করলে লাভ বেশি হয়। হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিক ৩০০ টাকা লাভ থাকে। এ দিয়ে কোনমতে সংসার চালানো হচ্ছে।
পিএম