মানুষের জীবনের দুরন্তপনা সময় হলো তার শৈশবকাল। এ সময়ে প্রকৃতির সাথে থাকে গভীর বন্ধুত্ব। যাদের মা বা বাবা নেই, কিংবা পারিবারিক আর্থিক অবস্থা দুর্বিষহ, তাদের ক্ষেত্রে এ চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। বেঁচে থাকার জন্য এ বয়সেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সবশেষে মিলে নামমাত্র কিছু অর্থ।
বলছিলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হলের ডাইনিং এবং ক্যান্টিন বালক নামে পরিচিত শিশুদের কথা। যাদের অনেকের মা নেই, কারও বাবা নেই। নিদারুণ কষ্টে কাটছে তাদের দিনকাল। জীর্ণ শরীর, ময়লা কাপড়। হলের অবশিষ্ট খাবার খেয়ে চলছে তাদের জীবন। তবুও চোখে ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হওয়ায় স্বপ্ন। কারো স্বপ্ন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আবার কেউ হতে চায় শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ১৪টি হল রয়েছে (ছেলেদের ৯টি এবং মেয়েদের ৫টি)। প্রতিটি হলে প্রায় ২ জন করে এমন শিশুরা কাজ করে। তাদের কাজ শিক্ষার্থীদের খাবার পরিবেশন এবং থালা-বাসন পরিষ্কার করা। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে দৈনিক মজুরি পায় মাত্র ১শ টাকা। এক বেলা কাজের জন্য ৫০ টাকা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বারের মোড় এবং কামাল রঞ্জিত মার্কেটের প্রতিটি হোটেলে একজন কর্মচারীর দৈনিক বেতন ৫শ টাকা।
ফজলুল হক হলের ক্যান্টিন বালক মো. আলহাজ, যার বয়স মাত্র ১০ বছর। স্বপ্ন ছিলো ব্যবসা করে মা বাবাকে সুখে রাখবে। ছোট সেই শিশু জানান, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখাও করেছিলাম। তারপর মা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। মায়ের চিকিৎসা এবং ক্ষুধার তাড়নায় হলের ক্যান্টিনে কাজ শুরু করি। সারাদিন হলে কাজ করতে হয়। পড়ালেখার সময় পাই না। দিন শেষে পায় ১শ’ টাকা। তিনি আরও বলেন, আমাকে একটু সুযোগ করে দেন, পড়ালেখা করতে চাই।
বড় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ডাইনিং বালক অনিকের। অল্প বয়সে হারান মায়ের স্নেহ। নানীর কোলই হয়ে উঠে মায়ের কোল। কিন্তু দারিদ্র্যের চোখ রাঙানি তাকে সহ্য হয়নি। বেঁচে থাকার জন্য কাজ শুরু করেন ডাইনিংয়ে। তিনি জানান, সারাদিন ডাইনিংয়ে কাজ করে পায় ৬০ টাকা। ওরা বলে আমার মাথায় সমস্যা, ছোট মানুষ কাজ পারি না।
আশরাফুল হক হলের সোনালু মুখমন্ডলের ডায়নিং বালক বাবু। তিনি জানান, কাজ না করলে খাব কি? বই, খাতা কেনার টাকা নেই। এই জন্য পড়ালেখাও ছেড়ে দিয়েছি। এখানে কাজ করলে অবশিষ্টাংশ খাবার পাই। মাস শেষে ২ হাজার টাকা। তা দিয়ে পরিবারের খরচ চালায়।
শহীদ শামসুল হক হলের একরামুলের স্বপ্ন বড় হয়ে সরকারি চাকরি করার। তিনি জানান, এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। মানসিক প্রতিবন্ধীতার অজুহাতে মাস শেষে পায় ৩ হাজার টাকা দেয়। বেতন বাড়ানোর কথা বললে কাজ ছেড়ে চলে যেতে বলে।
শ্রম মূল্যের বৈষম্য সর্ম্পকে জানতে চায়লে, ডাইনিংয়ের মালিকরা জানান, সবাই লাভের জন্যই ব্যবসা করে। আব্দুল জব্বারে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ওদের ভোক্তার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এখানে বিকাল এবং রাতে কাজ করতে হয়। এরা তো আর ওদের মতো কাজ করতে পারে না।
এইচএ