ঝালকাঠি শহর থেকে পশ্চিমে বাসন্ডা নদীর তীরে বাসন্ডা গ্রাম। ৫০ বছর আগে সেখানের গণি মিয়ার গামছার সুনাম ছিল দেশজুড়ে। বছর দশেক আগে গনি মিয়া মারা গেলে হারাতে বসেছিল তার গামছার সুনাম।
পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষায় বাবার দেখানো কৌশলে গামছা বুনে চলেছেন ছেলে নাসির উদ্দিন মিয়া। বিদ্যুৎচালিত স্বয়ংক্রিয় তাঁতে রঙিন গামছা তৈরি করছেন তিনি। তার দেখানো পথ ধরে গ্রামের তাঁতিরাও এসেছেন এগিয়ে। ধীরে ধীরে আবারও হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে ঝালকাঠির গামছা শিল্প।
স্থানীয়রা জানান, এক দশক আগেও বাসন্ডা গ্রামে বাস ছিল প্রায় ২০০ তাঁতি পরিবারের। তারা হস্তচালিত তাঁতে রঙিন সুতায় শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা বুনতেন। তারা সুনামের সাথে ভালই ব্যবসা করতেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা, কুষ্টিয়া, নারায়নগঞ্জ, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তাঁতে গামছা বোনার কাজ শুরু হয়। আর সেই থেকে একে একে বন্ধ হয় ঝালকাঠির তাঁত পল্লীর কুটির শিল্প।
গামছা বুনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনান ৪৫ বছর বয়সী নাসির উদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, 'বাবার মৃত্যুর পরেও আমি ও আমার মা হালিমা বেগম প্রতি সাড়ে তিন ঘণ্টায় দুটি তাঁতের গামছা তৈরি করতাম। মা এখন সুতা টানতে পারেন না। মেশিনচালিত তাঁতের কাছে ধীরে ধীরে হার মানতে বসেছিলাম। এখন আমরাই মেশিন কিনে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছি।'
কারিকররা জানান, আগে তারা হস্তচালিত তাঁতে দিনে সর্বোচ্চ তিনটি গামছা বোনা যেত। আর এখন প্রতিদিন ১০০ থেকে দেড়শটি গামছা তৈরি করা সম্ভব। এতে বাজারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কলকাতার উত্তর চব্বিশ পরগনার কাপড় ব্যবসায়ী উত্তম কুমার নাথ জানান, ঝালকাঠির গণিমিয়ার তাঁতের গামছা একসময় দিল্লিতেও পাওয়া যেত। আর তা কলকাতায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, এছাড়া বিধাননগর থেকে কৃষ্ণনগর ও লালগোলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেনে হকাররা ‘বাংলার গামছা’ নামে ঝালকাঠির গণি মিয়ার গামছা বিক্রি করেন।
ঝালকাঠি বিসিক শিল্পপনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক আলী আজগর নাসির বলেন, 'ঝালকাঠির গামছা একটি কুটির শিল্প। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিসিকে ঋণের আবেদন করলে, আমরা তাকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সহায়তা করে আসছি।'
এবি