রাজবাড়ীর চাষিরা গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হলেও এবার হতাশায় ভূগছেন । বেশি দামে বীজ ক্রয়,প্রতিকুল আবহাওয়ার প্রভাবে ফলন নেমেছে অর্ধেকে। সেই সাথে বাজারে আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে তাদের। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ,ফলন কম পেলেও লোকসানে পড়বে না চাষিরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোন কোন মাঠে যত দূর চোখ যায় ততো দূর পর্যন্ত শুধু পেঁয়াজ খেত চোখে পড়ে। পেঁয়াজ গাছ গুলো সবুজ হয়ে রয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষিরা শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছে জমিতে। কেউ পেঁয়াজ খেতে নিরানী দিচ্ছে,কেউ আগাছা পরিস্কার করছে ,কেউ জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করছে।
কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক। এবছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। বীজ,সার,শ্রমিক দিয়ে তিন বিঘায় তার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। আশাছিলো কাঙ্খিত ফলন ও বাজারে আশানুরুপ দামে বিক্রি করে লাভেরমুখ দেখবে। কিন্তু তার সেই আশাই এখন দুশ্চিন্তার কারণ। গত বছর বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ পেলেও এবার ফলন কম হওয়ায় বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ পাচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ করে। সেই সাথে বাজারে আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হবে দেড় লাখ টাকা। এই ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা তিনি।
চাষি আব্দুল মালেকের মত একই অবস্থা জেলার অন্য চাষিদেরও। চাষিরা বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপন পিছিয়ে যাওয়ায় এবছর পেঁয়াজের ফলন অর্ধেক পাচ্ছে। এ বছর প্রতি বিঘায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত বছর বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও এবার ফলন কম হওয়ায় বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ পাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০মণ করে। এক দিকে ফলন কম, আরেক দিকে বাজারে কাঙ্খিত পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করার দাবি তাদের।
চাষি মোঃ ফারুক বলেন ,গত বছরর মত ফলন হয় নাই। এবছর ফলন কম হয়েছে। প্রতি বিঘায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত বছর যে ফলন ছিলো ও বাজারে যে দাম ছিলো তাতে আমরা লাভবান হইছিলাম। কিন্তু এবছর ফলন কম ও দাম কম হওয়ায় বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
আরেক চাষি সালাম শেখ বলেন, মাঠ থেকে কেউ পেঁয়াজ উঠাচ্ছে না। কারণ হলো পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে এবার সাথে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।আমাদের দাবি সরকার যদি বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করতো তাহলে আমরা একটু বাঁচতাম।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ,গোলাম রাসূল বলেন, এবছর জেলায় ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপনের সময় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে আবাদ পিছিয়ে যাওয়ায় ফলন কিছুটা কম হবে।আর পেঁয়াজের দাম সব সময় উঠানামা করে। এখন যে দামটা পাচ্ছে চাষিরা এর থেকে একটু বেশি হলে কৃষকেরা লাভবান হতো। তারপরও যেটা পাচ্ছে সেটায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে না তবে কৃষকের লাভের পরিমানটা কমে যাবে।
এমআর