শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর প্রতিবেদন ছুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস নামের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ও তার স্বজনদের দাবী ওই চিকিৎসকের পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট না করায় এমন কাণ্ড করেছেন তিনি। এর আগেও তিনি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে একই আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনরা জানায়, সদর উপজেলার দড়ির হাওলা এলাকার এসকান চৌকিদার মঙ্গলবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার স্বজনরা তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসময় হাসপাতালের চিকিৎসক মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস রোগীকে কিছু পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন এবং একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে সেগুলো করার পরামর্শ দেন। তবে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকের উল্লেখ করা ক্লিনিকে না গিয়ে অন্য আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষাগুলো করান। পরবর্তীতে সেই রিপোর্টগুলো নিয়ে আসলে কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস রিপোর্টগুলো দেখবেন না বলে সেগুলো ছুড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।
এসকান চৌকিদারের ছেলে হেদায়েত বলেন, বাবা হঠাৎ করেই দুপুরে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন।আমরা তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দ্রুত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস বাবার চিকিৎসার জন্য কিছু পরীক্ষার নির্দেশ দেন এবং তিনি পরীক্ষাগুলো একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিক থেকে করানোর কথা বলেন। কিন্তু আমরা আর্থিক সমস্যার কারণে ওই ক্লিনিকে না গিয়ে অন্য একটি ক্লিনিকে পরীক্ষাগুলো করাই। কিন্তু রিপোর্ট নিয়ে আসার পর চিকিৎসক সেগুলো দেখতে অস্বীকৃতি জানান এবং আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের এমন আচরণে আমরা খুবই হতাশ ও বিপাকে পড়েছি।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা লিখন নামের এক ব্যক্তি বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট ক্লিনিকে পরীক্ষার অনুরোধ নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। পরীক্ষাগুলো অন্য কোথাও করালে অনেক সময় চিকিৎসকরা রিপোর্ট গ্রহণ করেন না। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও সাধারণ রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা চাই, চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে এমন হয়রানি বন্ধ হোক এবং সবার জন্য সঠিক ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।
অভিযুক্ত এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করারও বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সে সরকারি হাসপাতালে বসে প্রাইভেট ক্লিনিকের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। তবে কোন ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যদিও এ বিষয়ে সরাসরি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি চিকিৎসক কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. আকরাম এলাহী বলেন, বিষয়টি জানতে পেয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেছি। এটি আসলে একটি একটি ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপার ছিলো। চিকিৎসা সেবায় কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব এবং সেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবো।
পিএম