বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু বলেছেন, ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে পরাজিত করা যাবে না।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ঝিনাইদহে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
সুলতান সালাউদ্দীন টুকু বলেন, অনেকে বলছে আমরা নাকি ক্ষমতার জন্য নির্বাচন চাচ্ছি। কিন্তু আমরা দল হিসেবে কখনো ক্ষমতার জন্য চেষ্টা করিনি। বিএনপিকে বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করে। বিএনপি ও বাংলাদেশের জনগণকে ভালোবাসে।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যদি মনে করতেন, আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছি, আমি প্রধানমন্ত্রী হব বা প্রেসিডেন্ট হব, হতে পারতেন না? তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করতে পারতেন কিন্তু তা তিনি করেননি। কারণ, তার ক্ষমতার লোভ ছিল না। ’৯০-এর যারা ছাত্র আন্দোলনে ছিল, তারা ক্ষমতার দাবি করেনি। কিন্তু আপনাদের ক্ষমতার লোভ করতে হবে, এটা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না।
যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছে একটি নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে। আমরাও সমর্থন দিয়েছি একটি নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে। কিন্তু জনগণ সেই নিরপেক্ষতা দেখতে পাচ্ছে না।
টুকু বলেন, অনেকে দাবি করতে চান যে জুলাই-আগস্টে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে, দেশ গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলন গত ১৭ বছর ধরে চলেছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যেকোনো আন্দোলন সফল হতে হলে এর পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস থাকে। জুলাই-আগস্টে যে আন্দোলন সফল হয়েছে, এই আন্দোলনে বিএনপির দীর্ঘ সময়ের রেকর্ড রয়েছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অতএব এই আন্দোলনে বিএনপি অংশগ্রহণের দাবিদার।
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে কেন পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে এরকম দুর্নীতি করেছে কোনো দল এটার প্রমাণ পাওয়া যাবে না। বিএনপি এবং ছাত্র-জনতার ত্যাগের ফলে আমরা আবার নতুন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি। সুতরাং আমাদের উচিত এই সময়ে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা।
তিনি বলেন, এখন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। সংস্কারতো বিএনপি একবছর আগে ৩১ দফার মাধ্যমে জনগণের কাছে দিয়েছে। সংস্কার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হতে পারে না। এই সরকার বলছে তারা নাকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করবে, এটা হতে পারে না। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। অতএব, আমরা সংস্কারও চাই। কিন্তু অগ্রাধিকার দিতে হবে নির্বাচনকে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত রয়েছেন, যার ফলে দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রকে চলমান রাখতে অবিলম্বে নির্বাচন প্রয়োজন। এখনো দেশে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা ঘাপটি মেরে আছে। কাজেই সংস্কারে বিলম্ব হলে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ও দেশের জনগণের চাহিদা মেটাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। ৩১ দফা বাস্তবায়ন হলে মানবিক বাংলাদেশ, স্বচ্ছ বাংলাদেশ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠিত হবে বলে জানান যুবদলের সাবেক এই নেতা।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সুলতান সালাউদ্দীন বলেন, আপনারা যেভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, ঠিক সেইভাবে এখন জনগণের পাশে দাঁড়ান, জনকল্যাণমুখী কাজে অংশগ্রহণ করুন। বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের দল, বিএনপির মূল শক্তি জনগণ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আজ সারাদেশের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংগঠিত। এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে তিনি সকল নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়াও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিষ্টার মীর মো হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঝিনাইদহ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফএস