২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্যে দিয়ে কাজ শুরু হয় ‘তুফান’ চলচ্চিত্রের। সেই থেকে হৈচৈ-এর শুরু ঢালিউড সুপার স্টার শাকিব খান অভিনীত এই নতুন মুভি নিয়ে। ২৮ মার্চ প্রথম পোস্টার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে দর্শক ও গণমাধ্যমজুড়ে জল্পনা-কল্পনা যেন আরও বেড়ে গেছে।
শাকিব ভক্ত ছাড়াও ছবিটি এবার বাংলা মুভিপ্রেমিদের আরও বড় অংশকে আকৃষ্ট করছে। কেননা বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটিতে অংশ নিচ্ছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সব তারকারা। চলুন, অ্যাকশন ঘরানার চলচ্চিত্র ‘তুফান’ নিয়ে চমকপ্রদ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
‘তুফান’ এর পর্দার পেছনের শিল্পীরা
ছবিটির নির্দেশনায় রয়েছেন এ সময়ের ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফি। প্রথম ছবি ‘পোড়ামন ২’ (২০১৮) দিয়ে বাজিমাত করার পর থেকে তিনি একের পর এক দুর্দান্ত ছবি উপহার দিয়ে চলেছেন। ‘পরান’ (২০২২), ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ (২০২১) এবং ‘সুড়ঙ্গ’ (২০২৩) এ অনবদ্য নির্মাণশৈলী রাফিকে এনে দিয়েছে স্বতন্ত্র ভক্তশ্রেণী।
বাংলাদেশের আলফা-আই স্টুডিওস ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি এবং ভারতের এসভিএফ- এই ৩টি প্রোডাকশন হাউজ যৌথভাবে প্রযোজনা করছে ছবিটি। স্বভাবতই নির্মাণ খরচের প্রতিযোগিতায় সমসাময়িক সব সিনেমাকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে ‘তুফান’।
‘তুফান’ চলচ্চিত্রের গল্প
কাহিনী ও চিত্রনাট্য নিয়ে পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরা এখনও গোপনীয়তা বজায় রেখে চলেছেন। এরই মধ্যে ফার্স্ট লুক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ভক্তদের মাঝে ছবি নিয়ে কৌতুহলটা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
সোফায় হেলান দেওয়া শাকিব খানের বৈমানিক সানগ্লাসের সঙ্গে কালো জ্যাকেট, লম্বা ও ঢেউ খেলানো চুল মারদাঙ্গা কাহিনীর আভাস দিচ্ছে।
বুকের কাছে বোতাম খোলা শার্টের মাঝে গলার কালো লকেট, হাতের অনামিকা ও কনিষ্ঠায় কালো আংটি। এর সঙ্গে পায়ের কাছে কালো বন্দুকটি হলিউডের গডফাদার মুভির কথা মনে করিয়ে দেয়। সর্বপরি, দর্শক এবার পূর্ণদৈর্ঘ্য পর্দায় দেখতে চলেছে গ্যাংস্টার শাকিবকে। সেই সূত্রে বলা যেতে পারে যে, আদ্যোপান্ত হাই-ভোল্টেজ অ্যাকশন ঘরানার ছবি হতে যাচ্ছে ‘তুফান’।
‘তুফান’ এ দুই বাংলার সেরা তারকারা
সিনেমাটির সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বিষয়টি হলো এর কাস্টিং। বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় সব তারকাদের বড় পর্দায় একসঙ্গে দেখা যাবে এখানে। ফলে প্রত্যেক তারকার স্বতন্ত্র ভক্তদের সংযোজনে দুই বাংলা জুড়ে বিশাল এক দর্শক শ্রেণী তৈরি হয়েছে ‘তুফান’ এর জন্য।
শাকিব খানের বিপরীতে প্রধান সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন কলকাতার তারকা মিমি চক্রবর্তী।
এটি কেবল মিমি-শাকিব জুটির প্রথম ছবিই নয়, সেই সঙ্গে এটি মিমির অভিনয় ক্যারিয়ারেও প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। ২০১২ সালের ‘বাপি বাড়ি যা’ এবং ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ দিয়ে লাইমলাইটে আসেন মিমি। এরপর থেকে বিভিন্ন আর্ট ফিল্মসহ অনেক ব্যবসায়িক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিগত বছরগুলোতে তার সেরা কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এসওএস কলকাতা’ (২০২০) এবং ‘বাজি’ (২০২১)।
‘তুফান’-এ প্রধান সহশিল্পী হিসেবে আরও থাকছেন বাংলাদেশের ছোট পর্দার তারকা মাসুমা রহমান নাবিলা। বড় পর্দায় আনাগোণাটা খুব একটা না থাকলেও ‘আয়নাবাজি’ (২০১৬)-এর মাধ্যমে দর্শকদের মনে এক বিশাল জায়গা করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে টলিউড অভিনেতা যীশু সেনগুপ্তকে। বিনোদন জগতে তার পদার্পণ বেশ আগে হলেও ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ (২০০৮), ‘আবহমান’ (২০১০), ‘নৌকাডুবি’ (২০১১), ‘চিত্রাঙ্গদা’ (২০১২) চলচ্চিত্রগুলো তাকে ব্যাপক সুখ্যাতি এনে দিয়েছে। বিগত দশকে তার সেরা কাজগুলো ছিলো ২০১৪-এর ‘জাতিস্মর’, ২০১৫-এর ‘রাজকাহিনী’ ও ‘আরশিনগর’, ২০১৬-এর ‘জুলফিকার’।
অতিথি চরিত্র হলেও ‘তুফান’-এর সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরীর যুক্ত হওয়াটা দারুণ চমক দিয়েছে মুভিপ্রেমীদের।
চলতি বছরের ‘রুমি’ এবং ‘মনোগামী’ এর জনপ্রিয়তার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন সিনেমার খবরটি নেটিজেনদের মধ্যে রীতিমতো প্রত্যাশার ঝর বইয়ে দিয়েছে। বিশেষ চরিত্রটি কেমন হবে তা এখনও খোলাসা করা হয়নি। ফলে রায়হান রাফি ও চঞ্চল চৌধুরীর এই কাজ নিয়ে কৌতুহল বেড়েই চলেছে সিনেমাপ্রেমীদের।
এখানেই শেষ নয়; ‘তুফান’ টিমের সঙ্গে আরও রয়েছেন ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার বিজয়ী বর্ষিয়ান অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তার এই সেরা কাজগুলো হচ্ছে ‘শঙ্খনাদ’ (২০০৪), ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’ (২০১৬), ‘ফাগুন হাওয়ায়’ (২০১৯), ‘গহীন বালুচর’ (২০১৭) এবং ‘বিশ্বসুন্দরী’ (২০২০), এবং ‘নোনা জলের কাব্য’ (২০২১)। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বহু সিনেমায় কাজ করলেও শাকিব খানের সঙ্গে এই প্রথম কাজ করছেন ফজলুর রহমান বাবু।
এছাড়া রায়হান রাফির ২০২১ সালের সিনেমা ‘খাচার ভিতর অচিন পাখি’তেও তার কাজ ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হয়। যে কোনো চরিত্রে অবলীলায় মিশে যাওয়ার মতো এক অদ্ভূত স্বতঃস্ফূর্ততা রয়েছে এই শক্তিমান অভিনেতার মাঝে।
‘তুফান’ সিনেমায় আরও দেখা যাবে শহীদুজ্জামান সেলিম, একে আজাদ সেতু, গাজী রাকায়েত এবং হাসনাত রিপনকে।
কবে মুক্তি পাচ্ছে ‘তুফান’
সিনেমার শুটিং শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এ পর্যন্ত ভারতের হায়দারাবাদের রামুজি ফিল্ম সিটিতে শুটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৯০ দশকের গাড়ি, বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনায় সাজানো সেটটি দারুণ ভাবে নজর কেঁড়েছিল দর্শকদের।
বর্তমানে কলকাতা শহরে দৃশ্য ধারণের কাজ চলছে, যেটি শুরু হয়েছিল গত ১৫ এপ্রিল থেকে। চলবে প্রায় এক মাস ধরে। পরিকল্পনা অনুসারে একটি ট্রেইলারও প্রকাশ করা হবে শিগগিরই। বাকি সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে যাবতীয় চমক নিয়ে ‘তুফান’ এর পর্দা উঠবে আগামী ঈদুল আজহায়।
শেষাংশ
দুই বাংলার বড় বড় ৩টি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সমর্থনে শাকিব খানের ‘তুফান’ মুভি বাংলাদেশি ছবির জন্য এক মাইলফলক হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) এর বদৌলতে রায়হান রাফির ভিন্ন ধারার নির্মাণশৈলী বাংলাদেশি ছবির নতুনত্বের ব্যাপারে অবহিত করবে গোটা বিশ্বকে।
অন্যদিকে, শাকিব খানসহ মিমি চক্রবর্তী, যীশু সেনগুপ্ত, চঞ্চল চৌধুরী, মাসুমা রহমান নাবিলা, ও ফজলুর রহমান বাবুর ভক্তরা সব মিলে বিশাল এক দর্শক শ্রেণী তৈরি করছে ‘তুফান’-এর জন্য। এই ধারাবাহিকতায় সর্বাঙ্গীনভাবে এই সিনেমার জন্য শৈল্পিক গুনগত মানের পাশাপাশি থাকছে ব্যবসায়িকভাবেও সফল হওয়ার অপার সম্ভাবনা।